সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতির বিধান বাতিল
এখন থেকে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তার বা আটক করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি লাগবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট; এ সংক্রান্ত 'সরকারি চাকরি আইন'-এর ৪১ (১) ধারাটিকে সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে বুধবার (২৪ আগস্ট) আদালত এক পর্যবেক্ষণে বলেন, কোনো সরকারি কর্মচারীকে ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার করতে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নেওয়া সংক্রান্ত 'সরকারি চাকরি আইন ২০১৮'-এর ৪১ (১) ধারাটি বৈষম্যমূলক; একটি বিশেষগোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে এই বিধানটি করা হয়েছে।
সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতির বিধান রেখে তিন বছর আগে কার্যকর হওয়া 'সরকারি চাকরি আইন'টি নিয়ে বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
উল্লেখ্য, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায় এবং রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সরকারি চাকরি আইনের গেজেট জারি হয়। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সে বছরের ১ অক্টোবর থেকে এ আইনটি কার্যকর হয়।
আইনের ৪১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সহিত সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার পূর্বে, তাকে গ্রেপ্তার করতে হলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে।
আইনটি কার্যকর হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যেই হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে সরকারি চাকরি আইনের ৪১ (১) ধারাটি কেন সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনের নামে জেলা প্রশাসনের একটি পুকুরের নামকরণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে ২০২০ সালের ১৩ মার্চ মধ্যরাতে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান জেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা। এরপর তাকে ক্রসফায়ারে দেয়ার হুমকি দিয়ে জেলা প্রশাসনে নিয়ে বিবস্ত্র করে পাশবিক নির্যাতন করা হয়। পরে তার কাছে আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা পাওয়ার অভিযোগ এনে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে মধ্যরাতেই কারাগারে পাঠানো হয়।
এ ঘটনা গণমাধ্যমগুলো তুলে ধরলে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
গত বছরের ২৩ আগস্ট ফৌজদারি মামলার আসামি কুড়িগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনসহ চারজনের পোস্টিংয়ের বৈধতা নিয়ে আরিফুল ইসলাম রিগানের দায়ের করা রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।