পর্যায়ক্রমে সারারাত খোলা থাকতে পারে হাসপাতালের আশেপাশের ওষুধের দোকান
মধ্যরাতে ওষুধের দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত থেকে সরে যায়নি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তবে ১ সেপ্টেম্বর থেকে রাত ১২টার পর হাসপাতালের আশেপাশের ওষুধের দোকান পর্যায়ক্রমে (বাই রোটেশন) খোলা রাখা হতে পারে বলে জানা গেছে।
রাত ১২টার পর হাসপাতালের আশেপাশের ওষুধ দোকান খোলা রাখার বিষয়ে বৃহস্পতিবার সকালে মেডিসিন দোকান মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনায় বসবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তবে পাড়া-মহল্লার ওষুধের দোকান ১২টার পরই বন্ধ হয়ে যাবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ মেডিসিন দোকান মালিক সমিতির সভাপতি লুৎফর রহমান খান বলেন, 'ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সারা রাত খোলা থাকে এবং সারা রাত রোগীদের ওষুধের প্রয়োজন হয়। রাত ১২টার পর ওষুধের দোকান বন্ধ থাকলে রোগীরা বিপদে পড়বে। তাই প্রয়োজনে রোস্টার ভিত্তিতে সারা রাত দোকান খোলা রাখতে হবে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আলোচনার জন্য আমাদের ডেকেছে। আমরা সেখানে আমাদের দাবি ও কে কে রোস্টার ভিত্তিতে দোকান খোলা রাখতে পারবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবো।'
লুৎফর রহমান খান বলেন, 'ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আশেপাশে প্রায় ১০০ ওষুধের দোকান আছে। এ দোকানগুলোর মধ্যে যারা ইমার্জেন্সি ওষুধ রাখে, সেসব দোকান পর্যায়ক্রমে সারা রাত খোলা থাকবে। সে হিসেবে একেকটি দোকান ৪-৫ দিন সারা রাত খোলা থাকবে। কোন কোন দোকান সারা রাত খোলা রাখতে চায়, কবে কোন দোকান খোলা থাকবে সে বিষয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে মিটিং করে সিটি করপোরেশনকে জানাবো।'
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো আজ (১ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টা থেকে সাধারণ ওষুধের দোকান ও রাত দুইটার পর হাসপাতালের সঙ্গে সংযুক্ত নিজস্ব ওষুধের দোকান বন্ধের নির্দেশনা দিয়ে গত ২২ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি জারি করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
ওষুধের দোকান বন্ধের এ সিদ্ধান্তের পর ব্যাপক সমালোচনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ আগস্ট স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব ওষুধের দোকান ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকবে।
তিনি বলেন, "রাত ১২টার পর ওষুধ ও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রিতে কোনো বাধা নেই। এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ওষুধের দোকান ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হবে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন যদি ভিন্ন কিছু চায়, তাহলে তাদের সাথে আমাদের বসতে হবে।"
তবে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানা যায় নি।
বুধবার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয়তা অনুসারে সংশ্লিষ্ট ঔষধের দোকানের সময়সীমা পর্যালোচনা ও পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, "অবশ্যই ঔষধ একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। এজন্য বিবেচনা করেই আমরা মহল্লার ঔষধের দোকানগুলোকে রাত বারোটা পর্যন্ত সর্বোচ্চ সময় দিয়েছি। আমরা খুব গুরুত্ব অনুভব করি যে, হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট ঔষধের সবসময় একটি তাগাদা থাকতে পারে এবং প্রয়োজন থাকে। এজন্য আমরা রাত দুইটা পর্যন্ত করেছি। আমরা মনে করি যে, এটা যৌক্তিক। তারপরও কোনো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে লিখিত জানালে আমরা সেটা পর্যালোচনাপূর্বক বিবেচনা করব।"
মেয়র আরো বলেন, "ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বাংলাদেশের মধ্যে অত্যন্ত ব্যস্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল। তারা যদি আমাদেরকে লিখিতভাবে জানায়, তাহলে আমরা সেটা পর্যালোচনা করে পুনর্বিবেচনা করব। কিছু ক্ষেত্রে, যেখানে প্রয়োজন হয়- ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা যেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে হয়তোবা সময়টা বর্ধিত করা যেতে পারে। এটা সেই হাসপাতাল ও এলাকার প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করেই করা হবে। এখন থেকে ঢালাওভাবে কোনো সময়সূচি ছাড়া কেউ চলতে (কার্যক্রম পরিচালনা) পারবে না। সবাইকে একটা সময়সূচির মধ্যে আসতে হবে।"
মেয়রের বক্তব্যের বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক টিবিএসকে বলেন, "ওষুধের দোকান খোলা রাখার বিষয়ে আমরা কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারিনা। তবে মেয়রের সাথে বুধবার আমার কথা হয়েছে। পরে দোকান মালিক সমিতির নেতাদের রোস্টার ভিত্তিতে দোকান খোলা রাখাসহ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছি। আমরা চাই আমাদের রোগীদের যাতে কোন ভোগান্তি না হয়।"
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (মিটফোর্ড হাসপাতাল) এবং মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায়। এই দুই হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাতে ওষুধের দোকান খোলা রাখার বিষয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে তাদের কোন যোগাযোগ হয়নি। তবে রোগীদের স্বার্থে তারা সারারাত ওষুধের দোকান খোলা রাখা উচিৎ বলে মনে করেন।