সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতি নিয়ে হাইকোর্টের রায় স্থগিত
সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের পূর্ব অনুমতির বিধান বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে, এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৩ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন আজকের (১ সেপ্টেম্বর) শুনানির সময় সরকারের পক্ষে রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।
এর আগে বুধবার (৩১ আগস্ট) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আপিল বিভাগে যায় সরকার।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের করা লিভ টু আপিল আবেদনের শুনানি শেষে চেম্বার জজ এম এনায়েতুর রহিম বৃহস্পতিবার পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির দিন ধার্য করেন।
এর আগে, গত ২৪ আগস্ট আদালত এক পর্যবেক্ষণে বলেন, কোনো সরকারি কর্মচারীকে ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার করতে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নেওয়া সংক্রান্ত 'সরকারি চাকরি আইন ২০১৮'-এর ৪১ (১) ধারাটি বৈষম্যমূলক; একটি বিশেষগোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে এই বিধানটি করা হয়েছে।
সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতির বিধান রেখে তিন বছর আগে কার্যকর হওয়া 'সরকারি চাকরি আইন'টি নিয়ে বিস্ময়ও প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে, ২৫ আগস্ট সরকারি চাকরি আইন-২০১৮-এর বিতর্কিত বিধানকে হাইকোর্ট অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন।
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, ফৌজদারি অভিযোগে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তার করতে আইন প্রয়োগকারীকে আর সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে না।
রায়ে বলা আরও হয়, এই বিধান সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করে। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দেশের সমস্ত নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান সুরক্ষা লাভের অধিকারী।
আদালত আরও বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ৩২(ক) ধারা দুদকের কর্মীদের এ ধরনের সুরক্ষা প্রদান করে, কিন্তু হাইকোর্ট পরে সেই বিধানও বাতিল করে দেন।
১৪ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে সরকারি চাকরি আইন-২০১৮-এর গেজেট জারি করা হয়। পরবর্তীতে সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অক্টোবর থেকে আইনটি কার্যকর করার জন্য আরেকটি গেজেট জারি করে।
আইনটি কার্যকর হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যেই জনস্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষ থেকে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে সরকারি চাকরি আইনের ৪১ (১) ধারাটি কেন সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।