ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় থমকে আছে চট্টগ্রামের বাস টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প
ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে চট্টগ্রাম নগরীর কুলগাঁও বালুছড়া এলাকায় আন্তঃজেলা আধুনিক বাস টার্মিনাল নির্মাণের কাজ এখনও শুরু করতে পারেনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। এদিকে, আগামী বছর জুনে শেষ হতে চলেছে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নির্ধারিত সময়সীমা।
চট্টগ্রামের উত্তরাঞ্চলের হাটহাজারী, নাজিরহাট, ফটিকছড়ি, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ার মতো ৩২টি রুটে বাস চলাচলের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) ২০১৮ সালে ২৯৭ কোটি টাকার এই টার্মিনাল প্রকল্পটির কাজ অনুমোদন দেয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে সিটি কর্পোরেশন পরবর্তীতে প্রায় ৮ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে ১৩০ কোটি টাকা প্রদান করে। কিন্তু জেলা প্রশাসন চার বছরেও জমি হস্তান্তর করতে না পারায় টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারেনি বলে জানিয়েছে সিটি কর্পোরেশন।
চট্টগ্রাম আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির তথ্যমতে, নগরীর অক্সিজেন মোড় থেকে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ির প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়াও উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী, নাজিরহাট, ফটিকছড়ি, রাউজান, রাঙ্গুনিয়াসহ ৩২টি রুটের বাস ছেড়ে যায়। এই রুটে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ বাস চলাচল করে। এতে প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত করেন।
সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহাজাহান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এই অঞ্চলের জন্য কোনো স্থায়ী টার্মিনাল না থাকায় মূল সড়কে গাড়ি রাখতে হয়। ফলে সবসময় যানজট লেগে থাকে।"
"সবসময় বল হয়, এখানে যাত্রী সেবা নেই। আসলে এখানে যাত্রী সেবার কোনো ব্যবস্থাই নেই। মূল রাস্তায় গাড়ি রাখলে নিয়মিত ডিজেল চুরি হয়। টার্মিনাল না থাকায় বিভিন্ন রুটের বাস চালকরা এসেই আবার চলে যান। তাদের গাড়ি রেখে বিশ্রাম নেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ে," যোগ করেন তিনি।
১৯৯৩ সালের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালের পর, গত ৩০ বছরে চট্টগ্রামে নতুন কোনো বাস টার্মিনাল নির্মিত হয়নি। এদিকে, দ্রুত নগরায়নের ফলে শহরের যানজট ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০১৫ সালে চট্টগ্রামের তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন নগরীর কুলগাঁও বালুচরা এলাকায় একটি আধুনিক বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেন। 'সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন ও বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ' শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় অনুমোদন পায়।
জেলা প্রশাসন বলেছে, টার্মিনালের জন্য নির্ধারিত জায়গাটিতে চার ধরণের জমি রয়েছে- আবাসিক, বাণিজ্যিক, কৃষি এবং নিচু জমি।
জমির ক্যাটাগরি অনুযায়ী মালিকদের ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নিচু জমির কয়েকজন মালিক কৃষিজমির হার অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
সাধারণত, কৃষিজমির ক্ষতিপূরণের হার নিচু জমির হারের চেয়ে তিনগুণ বেশি।
সিটি কর্পোরেশনের প্রকল্প পরিচালক ও প্রকৌশলী আবু সালেহ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "মেয়র সম্প্রতি নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেছেন। মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি নিচু জমিগুলোকে কৃষিজমি হিসেবে বিবেচনা করতে জেলা প্রশাসনকে চিঠিও দিয়েছেন।"
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ভূমি অধিগ্রহণ) মাসুদ কামাল জানান, মেয়রের চিঠিটি গত সপ্তাহে তিনি পেয়েছেন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। বিষয়টি শীঘ্রই চূড়ান্ত করা হবে।"