আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন মহাসড়ক: স্থলপথে ভারতে রপ্তানি বৃদ্ধির আশা
আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশের রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত প্রায় ৫১ কিলোমিটার সড়ক চার লেনের জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণের কাজ চলছে।
আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চার লেনের মহাসড়ক চালু হলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যের আরও প্রসার ঘটবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। মূলত এই মহাসড়ক চালু হলে উত্তর-পূর্ব ভারতের সেভেন সিস্টার খ্যাত সাতটি রাজ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। ফলে আন্তঃদেশীয় যোগাযোগ বাড়বে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা বলছেন, আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত আসতে এখন সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। যদি চার লেন মহাসড়ক চালু হয়, তাহলে সময় লাগবে আধা ঘণ্টার মতো। এতে করে পরিবহন খরচ কমে আসবে। তখন পণ্যবাহী ট্রাকগুলো একাধিক ট্রিপ দিতে পারবে।
এছাড়া সেভেন সিস্টার খ্যাত রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশি মাছ, শুটকি, প্লাস্টিক, ফার্নিচার ও পোল্ট্রি ফিডসহ বিভিন্ন পণ্যের ভালো চাহিদা আছে। চাহিদা বিবেচনায় স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি বাড়বে বলে আশা ব্যবসায়ীদের।
যদিও ডলার সংকটের কারণে এখন রপ্তানি কমে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে ভারতে। তবে রপ্তানির পাশাপাশি আমদানি বাণিজ্য চাঙা রাখতে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে নিষিদ্ধ ব্যতিত সব ধরনের পণ্য আমদানির অনুমতি দেওয়ার দাবি তাদের।
আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, "আমদানি-রপ্তানি বাড়াতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন খুবই জরুরি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রপ্তানি পণ্যের গাড়ি আসে বন্দরে। মহাসড়কটি চালু হলে সময় যেমন বাঁচবে, তেমনি কমবে পণ্যপরিবহন খরচও। সর্বোপরি রপ্তানি আরও বাড়বে বলে আশা করছি। তখন বন্দরের অনেক কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং সরকারেরও রাজস্ব বাড়বে।"
আখাউড়া স্থলবন্দরের সোয়েব ট্রেড ইন্টান্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রাজীব ভূঁইয়া বলেন, "বর্তমানে টাকা ও ভারতীয় রূপির বিপরীতে ডলার দাম চড়া হওয়ায় আখাউড়া স্থলবন্দরের রপ্তানিতে ভাটা পড়ে আছে। তবে ডলার সংকট যদি কেটে যায় এবং চার লেন মহাসড়ক চালু হয়- তাহলে ভারতে রপ্তানি আরও বাড়বে।"
এই চার লেন মহাসড়ককে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের সভাপতি আজিজুল হক বলেন, "উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশি পণ্যের যে চাহিদা আছে, সেটি কাজে লাগাতে পারলে রপ্তানি অনেকাংশে বেড়ে যাবে। এছাড়া যদি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা যায়, তাহলে অর্থনীতি যেমন চাঙা হবে, তেমনি বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে।"
যদিও করোনা মহামারিসহ নানা জটিলতায় চারলেন মহাসড়ক প্রকল্পের কাজ চলছে কিছুটা ধীরগতিতে। আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় তিন দফায় বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ।
এখন নতুন সংকট তৈরি করেছে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চার লেনের জাতীয় মহাসড়কটির দৈর্ঘ্য ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার।
তিন ভাগে ভাগ করে মহাসড়কের নির্মাণযজ্ঞ চলছে। এ কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আছে ভারতের এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।
২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদন পাওয়া ৩ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের মধ্যে। তবে ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতায় কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়।
পরবর্তীতে ২ হাজার ২২৪ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় এ পর্যন্ত তিন দফায় বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পটির মেয়াদ।
বর্ধিত মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২৫ সালের জুন মাসে। এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৩০ শতাংশের কিছু বেশি। এখন মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানের কিছু সেতু, বক্স কালভার্ট ও মাটি ফেলার কাজ চলছে।
আশুগঞ্জ নদীবন্দর-আখাউড়া স্থলবন্দর চারলেন মহাসড়ক প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মো. খালেদ শাহিদ বলেন, "রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে এখন নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য অনেক বেড়ে গেছে। এজন্য ঠিকাদারদের কাজে সমস্যা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের কাজের ৩০ শতাংশের বেশি অগ্রগতি হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি বর্ধিত মেয়াদে কাজ শেষ করার জন্য।"