জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনে ১৪টি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে ইসি
অংশগ্রহণমূলক জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করতে আগামী দেড় বছরের চূড়ান্ত রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
চ্যালেঞ্জ উত্তরণে আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম (ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন)-এর ব্যবহার সর্বোচ্চ ১৫০টি নির্বাচনী এলাকায় সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ইসি ভবনে আয়োজিত এক সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্য কমিশন তাদের কর্মপরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, আগামী বছরের নভেম্বরে চূড়ান্ত সময়সূচি ঘোষণা করা হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল অসুস্থতার কারণে বুধবারের আয়োজনে অংশ নিতে পারেননি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৮ সালের সংসদীয় নির্বাচনে শামসুল হুদার নেতৃত্বে তৎকালীন ইসি জরুরি শাসনাব্যবস্থায় জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর করতে বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি রোডম্যাপ উন্মোচন করে। তাঁর উত্তরসূরি কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ এবং কে এম নুরুল হুদাও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যথাক্রমে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের এক বছরেরও বেশি সময় আগে নির্বাচনী রোডম্যাপ উন্মোচন করেন।
শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসির রোডম্যাপ সফলভাবে বাস্তবায়নের ফলে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়। কিন্তু তার উত্তরসূরি রকিবউদ্দিন ও নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসি তা করতে পারেনি। এবার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন ইসি আগামী বছর একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে এসেছেন।
গতকাল ঘোষণা করা ইসির রোডম্যাপের চ্যালেঞ্জে বলা হয়েছে 'সরকারের কোনো সংস্থা কর্তৃক হয়রানিমূলক মামলা না করা।' এ বিষয় এক প্রশ্নের জবাবে ইলেকশন কমিশনার মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, 'সরকারের ওপর নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে চাপ থাকবে যেন রাজনৈতিক কারণে কোনো হয়রানিমূলক মামলা না করা হয়। কিন্তু যদি কেউ অপরাধ করে, তবে তার বিরুদ্ধে সরাসরি প্রমাণ সাপেক্ষে মামলা করা যাবে। কিন্তু অনুমানের ওপর ভিক্তি করে বা প্রমাণ ছাড়া কোনো মামলা যেন না হয় সেটা দেখতে হবে। বিশেষ করে নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার পরে।'
তিনি বলেন, 'এখনও নির্বাচন হতে এক বছর ৪ মাস বাকি আছে। একটি রাজনৈতিক দলের অনাস্থা রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে আমাদের রোডম্যাপে যা আছে সেগুলো যদি বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে আমাদের ধারণা কোনো দলের নির্বাচন নিয়ে অনাস্থা থাকবে না। রাজনৈতিক দল দেখে আমাদের কাজ। তারা যদি দেখে আমরা নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু এবং একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি তাহলে তাদের আস্থা ফিরে আসবে।'
মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, 'অতীতের কমিশন কী করেছে সেটা জানতে চাই না। সরকার, পুলিশ আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আমরা যদি দেখি আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারছি না, সেই মূহুর্ত থেকে আমরা দায়িত্ব পালন করব না।'
ইভিএম-এর বিষয় মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, 'আমাদের সামনে তিন বছর সময় থাকলে ৩০০ আসনেই ইভিএম-এ নির্বাচন করতাম। ইভিএম-এ এ ভোট নিলে ঝুঁকি থাকে না। যেহেতু ইভিএমে আগে-পরে ভোট দেয়ার সুযোগ নেই, তাই জাল ভোট দেওয়ার সুযোগও থাকে না। এখন আমাদের পুরো ৩০০ আসন ঝুঁকিপূর্ণ হলো না, ঝুঁকিপূর্ণ হলো ১৫০টি আসন। যেসব আসন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হবে সেখানে আমাদের ফোর্স বেশি রাখতে পারব।'
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান। তিনি বলেন, 'ঘোষিত রোডম্যাপের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো সবার জন্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা। আমরা আশাবাদী যে বিভিন্ন ইস্যুতে মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও সব রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।'
'আমরা অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি এবং এখানে অবশ্যই আস্থার অভাব রয়েছে। কিন্তু আমাদের উদ্যোগের সঙ্গে আমি বিশ্বাস করি আমরা আস্থা অর্জনের সঠিক পথে চলতে শুরু করেছি। রোডম্যাপটি এই বিষয়ে আমাদের দায়বদ্ধতা এবং দায়িত্ববোধকে উন্নত করতে সাহায্য করবে। ১৫০টির বেশি নির্বাচনী এলাকায় ইভিএম ব্যবহার করা হবে না। পর্যবেক্ষণের জন্য ভোটকেন্দ্রের ভিতরে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে,' বলেন তিনি।
একই কথার পুনরাবৃত্তি করে নির্বাচন কমিশনার রাশিদা সুলতানা এমিলি বলেন, 'আমরা আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যাব। সবার সহযোগিতা পেলে একটি অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারব।'
নির্বাচন কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, 'আমাদের সকল অংশীজনদের সহযোগিতা প্রয়োজন। এই রোডম্যাপ সঠিকভাবে সময়মতো বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হব।'
ইসি ঘোষিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপের সারসংক্ষেপ
আইন সংস্কার: ২০২২ আগস্ট থেকে ২০২৩ ফেব্রুয়ারি; সংলাপ: ২০২২ মার্চ- ২০২২ ডিসেম্বর; সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস: ২০২৩ জানুয়ারি- ২০২৩ জুন; আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার: আগস্ট ২০২২ থেকে ২০২৩ আগস্ট; নতুন দল নিবন্ধন: ২০২২ সেপ্টেম্বর- ২০২৩ জুন; ভোটার তালিকা: ২০২২ হালনাগাদ শুরু মে, ২০২৩ মার্চে চূড়ান্ত প্রকাশ এবং তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সংসদীয় আসন অনুযায়ী ৩০০ এলাকার তালিকা প্রস্তুত; ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ: ২০২৩ জুন থেকে আগস্ট ২০২৩ এবং তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের অন্তত ২৫ দিন আগে গেজেট প্রকাশ; প্রশিক্ষণ: ২০২৩ জানুয়ারি থেকে তফসিল ঘোষণার পরেও চলবে; পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন: জানুয়ারি ২০২৩ থেকে আগস্ট ২০২৩।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ইসির প্রাথমিক উদ্দেশ্যগুলো হলো-
দেশের সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সক্রিয় ও স্বেচ্ছা অংশগ্রহণ।
জনসাধারণের জন্য কমিশনের নির্বাচনী কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সব তথ্য অনলাইনে প্রকাশের মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ; পর্যাপ্ত দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকের উপস্থিতি এবং ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
সকল প্রার্থীর প্রতি সম-আচরণের মাধ্যমে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত; রিটার্নিং, প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে যোগ্য ও নিরপেক্ষ ইসি কর্মী নিয়োগ এবং পক্ষপাতের প্রমাণ পেলে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
দেশের সংবিধান ও আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কার্যক্রম এবং সকল ভোটার ও রাজনৈতিক দলের জন্য সন্তোষজনক নির্বাচনের ফলাফল নিশ্চিত করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রস্তাব প্রদান।
নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচনের দিন সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনুকূলে রেখে সুষ্ঠুতা অর্জনের পাশাপাশি সকল প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলা ও প্রচারণা চালানোর সমান সুযোগ নিশ্চিত করা এবং লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।
রোডম্যাপে ১৪টি চ্যালেঞ্জ ও তা মোকাবেলায় ১৯ দফা কর্মপরিকল্পনার উল্লেখ করেছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
চ্যালেঞ্জসমূহ
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা সৃষ্টি, নির্বাচনের দায়িত্বে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা বিশেষ করে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন, ব্যবহৃত ইভিএমের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা সৃষ্টি, অর্থ ও পেশীশক্তির নিয়ন্ত্রণ, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, সকল রাজনৈতিক দল কর্তৃক নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসরণ, নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে বিপক্ষ, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী-সমর্থক-পুলিশ-প্রশাসন কর্তৃক কোনো রকম বাধার সম্মুখীন না হওয়া, জালভোট, ভোটকেন্দ্র দখল ব্যালট ছিনতাই রোধ, প্ৰাৰ্থী-এজেন্ট-ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে অবাধ আগমন, ভোটারদের পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থীকে ভোট প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান, পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিতকরণ, পর্যাপ্ত সংখ্যক নির্বাহী-জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিতকরণ, নিরপেক্ষ দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োজিতকরণ।
চ্যালেঞ্জসমূহ উত্তরণের উপায়
বিশিষ্ট নাগরিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সংবিধান ও নির্বাচনী আইন অনুযায়ী যে সুপারিশগুলো অধিকাংশ জন করেছেন তা বাস্তবায়ন, সকল রাজনৈতিক দল যাতে নির্বাচনী প্রচারকার্য নির্বিঘ্নে করতে পারে সে বিষয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখা, সরকারের কোনো সংস্থা কর্তৃক হয়রানিমূলক মামলা না করা, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী-সমর্থক দ্বারা প্রার্থী, সমর্থক ও তাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ না করা। এমন হলে আইন অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ, নির্বাচনের পূর্বে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা, বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন, জননিরাপত্তা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, আনসার ও ভিডিপির প্রধানদের সঙ্গে সভা করে তাদের অধিনস্থ কর্মকর্তা যারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন তারা যেন আন্তরিকতা ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেন সে বিষয়ে অধীনস্তদের নির্দেশ দেওয়া, প্রত্যেক ভোটকক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, ভোট কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন, ইভিএমের ব্যবহার সবোর্চ্চ ১৫০ আসনে সীমাবদ্ধ রাখা। শুধুমাত্র মেট্রোপলিটন ও জেলা সদরের আসনগুলোতে ব্যবহার করা, নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার পরদিন থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োগ, নির্বাচনী আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগ, ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক সঙ্গে সঙ্গে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ, আরপিও ও নির্বাচনী আচরণ বিধিতে কতিপয় প্রয়োজনীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা, রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার যতদূর সম্ভব নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়া, রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের একটি তালিকা তৈরি করে তাদের প্রশিক্ষণ নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার পূর্বেই শুরু করা যাতে যথাযথভাবে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা সম্ভব হয়, যে সকল প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের বিষয়ে প্রার্থীর যুক্তিসংগত আপত্তি থাকবে তাদের নিয়োগ না দেওয়া, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগ ও তাদের জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে ব্রিফিং করা, গণমাধ্যম কর্মী নিয়োগ ও তাদের জন্যও ব্রিফিং-এর ব্যবস্থা করা, নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে অনীহা, পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন-১৯৯১ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা, প্রার্থীদের জনসভা করার জন্য স্থান, তারিখ, সময় সিডিউল করে দেওয়া।
ইভিএম নিয়ে সংলাপে ১২ দল সরাসরি ও ১১টি শর্ত সাপেক্ষে ইভিএম চেয়েছে, আর ৬টি দল সরাসরি বিপক্ষে অবস্থা নিয়েছে বলে রোডম্যাপে উল্লেখ করা হয়েছে।
রোডম্যাপ নিয়ে জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া
ইসি যে রোডম্যাপ দিয়েছে সেটিকে একটি সাজানো নির্বাচন অনুষ্ঠানের রোডম্যাপ বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের এমপি।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সরকারের জনসমর্থন না থাকায় যেনতেন নির্বাচন করতে মাতামাতি করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যেনতেন একটি নির্বাচন করার জন্যই একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করল ইসি।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন আগে থেকেই দায় এড়াতে বিভিন্ন ধরনের কথা বলছে। কখনো বলছে রাজনৈতিক দলগুলো সহায়তা না করলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। আবার কখনো বলছে, কাউকে নির্বাচনে নেওয়া নির্বাচন কমিশনের কাজ না। তাদের বুঝতে হবে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা নেই বলেই রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে যেতে চাচ্ছে না।
নির্বাচন কমিশনের উচিত সবার আস্থা অর্জনে চেষ্টা করা। শুধু আওয়ামী লীগ ও তাদের কিছু মিত্র ছাড়া কেউই নির্বাচনে ইভিএম চায়নি, কিন্তু নির্বাচন কমিশন হঠাৎ করেই ইভিএমে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে। দেশের মানুষ নির্বাচনে ইভিএম চায় না। আর এসব কারণেই দেশের মানুষ নির্বাচনের ওপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।
এই রোডম্যাপ আওয়ামী লীগের মস্তিষ্কপ্রসূত একটি রোডম্যাপ, যেখানে সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কোনো কর্মসূচি নেই। আগামী নির্বাচন রাতের-ভোটের মাধ্যমে হবে নাকি জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ও কর্মসূচি নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ টিবিএসকে বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন যাতে করে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হয়, নির্বাচন কমিশন সে লক্ষ্যেই একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করল।
তিনি বলেন, যারা দেশে গনতান্ত্রিক পরিবশে চায় না, তারা এই রোডম্যাপ নিয়ে নানা সমালোচনা করছে। নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের ওপর সরকারের কোনো প্রভাব থাকার সুযোগ নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি কেউ এই রোডম্যাপকে সাজানো বা লোক দেখানো বলে সমালোচনা করতে চায়, তাহলে তিনি বা তারা দেশের সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে চায়। তারা ভিন্ন কোনো পথে দেশের ক্ষমতায় আসতে চায়। ফলে তারা নির্বাচন কমিশনকে নানাভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।