মিয়ানমার সীমান্তে ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হবে: স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্ট জুড়ে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে অব্যাহত গোলাবারুদ বর্ষণে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সীমান্তে ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
ইতিমধ্যে প্রশাসন বিরূপ পরিস্থিতিতে অতি ঝুঁকিতে থাকা সীমান্তের অর্ধ-সহস্রাধিক পরিবারকে সরিয়ে নিতে প্রাথমিক তালিকাও তৈরী করেছে।
বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা গণমাধ্যমের কাছে বলেন, "সীমান্ত এলাকায় ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচনায় রেখেছি। এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিজিবি ও পুলিশসহ সীমান্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে জরুরি এক বৈঠকে করণীয় নির্ধারণ করেছেন।"
রোববার রাতে নাইক্ষ্যংছড়ির ইউএনও সালমা ফেরদৌস ও কয়েকজন জনপ্রতিনিধি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত মধ্য আগস্ট থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু, কোনার পাড়া, উত্তর পাড়া ও বাইশফাঁড়িসহ বিভিন্ন সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। যা এখন ছড়িয়ে পড়েছে পুরো নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মিয়ানমার সীমান্ত জুড়ে। প্রায় প্রতিদিনই দিনে ও রাতে থেমে থেমে গোলাবারুদ বর্ষণ; মাঝেমধ্যে হেলিকপ্টার ও ফাইটিং জেট বিমান থেকে ছোঁড়া হচ্ছে গোলাবারুদ।
রোববার রাত নয়টার পর থেকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে আবারো গোলাগুলি শুরু হয়। এতে আতংকিত সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা।
শুক্রবার রাতে ঘুমধুমের কোনার পাড়া সীমান্তের শূন্যরেখার আশ্রয় ক্যাম্প ও তমব্রু সীমান্তে আঘাত হানে মিয়ানমারের ছোঁড়া ৫টি মর্টার শেল। মর্টার শেল বিস্ফোরণে এক রোহিঙ্গা কিশোরের মৃত্যু এবং পাঁচজন আহত হয়েছে।
ওই দিন দুপুরে ঘুমধুমের বাইশফাঁড়ি সীমান্তের শূন্যরেখায় মাইন বিস্ফোরণে আহত হয়ে একটি পা হারায় স্থানীয় তঞ্চঙ্গা সম্প্রদায়ের এক যুবক।
এর আগে মিয়ানমারের ছোঁড়া দুইটি মর্টার শেল ঘুমধুমের উত্তর পাড়া সীমান্তে আঘাত হানলেও অবিস্ফোরিত হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
সীমান্তের এ উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার ও ফাইটিং জেট হেলিকপ্টার আকাশসীমা লঙ্ঘন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে।
এ ধরণের ভীতিকর পরিস্থিতিতে ঘুমধুম সীমান্তের ৩৫টি স্থানীয় পরিবার এবং কোনার পাড়া শূন্যরেখার আশ্রয় ক্যাম্প থেকে আতংকিত অনেক রোহিঙ্গা অন্যত্র নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে।
সীমান্তের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ির ইউএনও সালমা ফেরদৌস বলেন, রোববার সকাল থেকে পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু দুপুর গড়াতেই পুরো নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন সীমান্তে মিয়ানমার অভ্যন্তরে আবারো গোলাগুলি হয়, যা সন্ধ্যা নাগাদ অব্যাহত ছিল।
"তবে (রোববার) সন্ধ্যার পর থেকে গোলাগুলি থেমে যায়। কিন্তু রাত ৯টার পর থেকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে আবারো মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছে। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোন গোলাবারুদ পড়েনি।"
ইউএনও বলেন, "সীমান্তে বর্তমানে যারা (বাংলাদেশি) বসবাস করে তাদের নিরাপত্তা দেয়াটাই আমাদের (প্রশাসনের) অগ্রাধিকার কাজ। যেহেতু গত প্রায় এক মাস ধরে সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি চলছে, তাই এ নিয়ে প্রশাসন, বিজিবি, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিসহ সীমান্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসেছিলাম (বৈঠক)।"
"সীমান্তের কাছাকাছি যারা বসবাস করে তাদের নিরাপত্তার জন্য কী করা যায়, বৈঠকে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে " বলেন সালমা ফেরদৌস।
উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রোববার রাত ১০টার দিকেও সীমান্তের মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। তবে মিয়ানমারের ছোঁড়া কোন গোলা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পড়েনি।
"শুক্রবার রাতে উখিয়া উপজেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠক করেছেন। বৈঠকে আমাকে ডাকা না হলেও প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত মতে ইউএনও নির্দেশ দিয়েছেন, সীমান্তে শূন্যরেখার ৩০০ থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে বসবাসকারী বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে তালিকা তৈরী করতে। ইতিমধ্যে জরিপ করে ঝুঁকিতে থাকা পরিবারের তালিকা করা হয়েছে।"
গফুর উদ্দিন জানান, পালংখালী ইউনিয়নের ধামনখালী, পূর্ব জমিদার পাড়া ও পূর্ব বালুখালী সীমান্ত এলাকায় শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের তালিকা প্রশাসনের কাছে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য তসলিম ইকবাল চৌধুরী বলেন, "সীমান্তে চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা এবং চলমান এসএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিজিবিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে প্রশাসন কাজ করছে।"
"ইতিমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি সহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানতে পেরেছি, সীমান্তে বসবাসকারী ঝুঁকিতে থাকা অন্তত ৫০০ পরিবারকে চিহ্নিত করে সরিয়ে নিতে তালিকা তৈরী করা হয়েছে। সোমবার থেকে এসব পরিবারকে সরিয়ে নেওয়ার কথা রয়েছে।"
তসলিম আরও জানান, সীমান্তে আতংকে থাকা লোকজনের মধ্যে অনেকেই ইতিমধ্যে নিজেদের উদ্যোগে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।