জলাশয় ভরাটকে বৈধ করতে নতুন ড্যাপে ৭০% পরিবর্তন: সৈয়দা রিজওয়ানা
ঢাকা মহানগরের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)-এর পর্যালোচনা করার দায়িত্ব দেওয়া আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি পুরনো পরিকল্পনায় যে ৭০ শতাংশ সংশোধনী এনেছে, তা মূলত জলাশয় ভরাটকে বৈধ করার জন্য। পরিবেশবিদ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) নির্বাহী প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ অভিযোগ করেন।
শনিবার (১ অক্টোবর) রাজধানীতে এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি বলেন, নতুন ড্যাপে জলাশয়গুলোকে আবাসন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এডিটরস গিল্ড, বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত ঢাকা ড্যাপের অনুষ্ঠানে সৈয়দা রিজওয়ানা, ২০০০ সালে ক্ষমতাসীন দলের প্রণয়ন করা জলাশয় সংরক্ষণ আইন বিরোধী কাজ করার জন্য সরকারের সমালোচনা করেন।
এ ব্যাপারে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ঢাকা মহানগরের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে নিয়োজিত সংস্থা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)-এর নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেন।
"একজন পরিবেশবাদী হিসেবে আমি শুধু আহতই হচ্ছি, আর কিছু করতে পারছি না", বলেন রিজওয়ানা।
পরিবেশবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, সবচেয়ে বেশি বঞ্চনার শিকার এই শহরের অধিকাংশ মানুষ। ঢাকা শহরের অধিকাংশ মানুষ আবাসনের সমাধান ছাড়াই বসবাস করছে।
"রাজধানীর বস্তিগুলোতে বসবাস করে ৪৪ শতাংশের বেশি মানুষ। তারা প্রতি বর্গফুটে ভাড়া দেয় ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা। আর ধনী মানুষ ধানমন্ডিতে ভাড়া দেয় ২৮ টাকার মতো। গুলশান ও বনানীতে ৩০ থেকে ৩২ টাকা। এই অসমতার সমাধান ড্যাপে থাকতে হবে। দরিদ্র মানুষের আবাসন না হলে এটি (ড্যাপ) কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না," যোগ করেন তিনি।
ড্যাপের তথ্য তুলে ধরে ইকবাল হাবিব বলেন, সেন্ট্রাল ঢাকায় মাত্র ৫ শতাংশ বাড়ি পুরোপুরি নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে।
তবে বস্তিবাসীর সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় ২০ শতাংশেরও কম মানুষ বস্তিতে বাস করে। তিনি বলেন, "আমরা ২০৩৫ সালের মধ্যে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য ১ লাখ অ্যাপার্টমেন্ট ইউনিট তৈরি করার পরিকল্পনা করছি।"
ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্ট বাংলাদেশের (আইএবি) সভাপতি স্থপতি মোবাশ্বর হোসেন বলেন, ড্যাপ বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নেই। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে একটি নগর সরকার দরকার।
নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, "আমাদের শুধু আবাসন নিয়ে চিন্তা করলেই হবে না। এখানে রাস্তা, খালি স্থান, পার্ক, মাঠসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থাকতে হবে।"
ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, নতুন ড্যাপ নিয়ে এখনো আলোচনা ও সংশোধনের সুযোগ রয়েছে।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ বলেন, নদীরক্ষা কমিশনের সঙ্গে আলোচনা না করেই ড্যাপর প্রণয়ন করা হয়েছে।
ড্যাপের তথ্য অনুযায়ী, তারা প্রায় ৫৭৪ কিলোমিটারের ব্লু নেটওয়ার্ক ও জলকেন্দ্রীক ইকো পার্ক করতে চাচ্ছে।
"আইন অনুযায়ী নদীর সকল বিষয় দেখার দায়িত্ব নদী রক্ষা কমিশনের, কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে ড্যাপ প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। ড্যাপে অনেক কিছু আছে, যা বাংলাদেশের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এগুলো দ্রুত আলোচনা করে সংশোধন করা জরুরি," যোগ করেন তিনি।
এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থপতি গোলাম নাসির এবং রিহ্যাবের সহ-সভাপতি সোহেল রানা।