কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই প্লট বিক্রি করছে রাজশাহীর আবাসন প্রকল্প
রাজশাহীর সিটির হাট ও বায়া এলাকার মাঝামাঝি ৬,০০০ একর জমিতে 'উত্তরায়ণ আমানা সিটি' নামক একটি উচ্চাভিলাষী আবাসন প্রকল্প করা হবে- এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) অনুমোদন ছাড়াই লোভনীয় অফার দিয়ে প্লট বিক্রি করছে আমানা গ্রুপ।
কোম্পানিটি ইতোমধ্যেই প্রকল্পের ছয়টি সেক্টরের একটিতে প্রায় ৩০০ প্লট বিক্রি করেছে।
আরডিএ-এর নগর পরিকল্পনাবিদ আজমেরী আশরাফি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন, উত্তরায়ণ আমনা সিটির অনুমোদনের জন্য আরডিএ-তে কোনো আবেদন করা হয়নি।
"আরডিএ আইন অনুসারে ২ একরের বেশি জমিতে প্লট বিক্রির ক্ষেত্রে সরকারি অনুমোদন বাধ্যতামূলক এবং প্ল্যানের লেআউটের পূর্বানুমতি দিয়েই প্লট বিক্রি করতে হবে," বলেন তিনি।
আরডিএর ২০৪১ সালের মহাপরিকল্পনায় এই প্রকল্পের কোনো উল্লেখ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, "যেহেতু এই প্রকল্পের অনুমোদন হয়নি, তাই এটিকে মাস্টারপ্ল্যানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রশ্নই আসে না।"
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমানা গ্রুপের পরিচালক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রকল্পটির জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে অনুমতি নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে আরডিএ-র অনুমোদন প্রয়োজন, কিন্তু কৃষি জমিতে আবাসন প্রকল্প তৈরির জন্য ডিসির অনুমোদন প্রয়োজন বলে দাবি করেন আল মামুন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরডিএর এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, "আমনা গ্রুপ জমি না কিনে বুকিং মানি নিচ্ছে, যা এক ধরনের প্রতারণা। প্লট বুকিং এর ক্ষেত্রে জমির দাগ ও খতিয়ান নম্বরসহ সবকিছু উল্লেখ করতে হবে।"
খতিয়ান নম্বর এমন একটি সংখ্যা যা ভূমি রেকর্ডের বিবরণ সনাক্ত করতে সাহায্য করে। একটি খতিয়ান নম্বর সাধারণত একটি দাগ নম্বর নিয়ে গঠিত। ভূমি সংস্কারের সময় ভূমির জন্য দাগ নম্বর জারি করা হয় এবং যখন সেগুলোকে সাবপ্লটে বিভক্ত করা হয় তখন তাকে বলা হয় বাটা দাগ।
এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আবদুল্লাহ আল মামুন টিবিএসকে বলেন, "এখন পর্যন্ত আমরা প্রায় ৩৫০ বিঘা জমি কিনেছি এবং প্রায় ৩০০টি প্লট বিক্রি করেছি। বর্তমানে আমরা গ্রাহকদের কোনো দাগ ও খতিয়ান নম্বর দিচ্ছি না। শুধুমাত্র ব্লক এবং রাস্তার নম্বর উল্লেখ করে দিচ্ছি। পাঁচ বছর পর প্লট নিবন্ধন করা হবে।"
তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে চুক্তির অর্থের মাত্র ২০ থেকে ৩০ শতাংশ নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
রাজশাহী জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ শরিফুল হক বলেন, "অনুমোদন ছাড়াই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এমন কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব। প্রকল্প কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কেউ যদি হয়রানির অভিযোগ আনে তাহলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একটি উচ্চাভিলাষী প্রকল্প
প্রকল্প কর্তৃপক্ষের মতে, উত্তরায়ণ আমানা সিটি হবে দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রথম মেগাসিটি যা এখানকার বাসিন্দাদের শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিনোদনের সকল সুযোগ-সুবিধা দিবে।
কোম্পানির লিফলেটে আরো বলা আছে- এখানে থাকবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শপিং সেন্টার, খেলার মাঠ, ক্রিকেট একাডেমি এবং পাঁচ তারকা ও সাত তারকা হোটেল। এলাকার অভ্যন্তরে সব প্রধান ধর্মের জন্য ধর্মীয় উপাসনালয়ও থাকবে।
পুরো প্রকল্পটিতে একটি পৃথক বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, পুলিশ স্টেশন, নিজস্ব প্ল্যান্টেশন থেকে গ্যাস সুবিধা, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ইত্যাদিও থাকবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রকল্পে দেখানো মোট এলাকা এখনও একটি নিচু জলাভূমি। স্থানীয়ভাবে বিল হিসেবে পরিচিত এই এলাকায় আশেপাশের গ্রামের লোকজন বিভিন্ন ফসল চাষ করেন। বর্ষাকালে এলাকাটি পানির নিচে চলে যায় বলেও জানান তারা।
কোরবানির ঈদে উত্তরাঞ্চলের প্রধান গরুর হাটও প্রস্তাবিত প্রকল্পের জায়গায় বসে। তাছাড়া, জায়গাটির পাশে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের একটি ডাম্পিং গ্রাউন্ডও রয়েছে।
আবাসন প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পে ছয়টি সেক্টর থাকবে। তবে প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র একটি সেক্টরের উন্নয়ন কাজ চলবে। এই সেক্টরের প্লট ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে গ্রাহকদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে তারা টিবিএসকে জানান।
বিশেষ করে রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোর জেলার মানুষ উত্তরায়ণ সিটিতে আধুনিক নাগরিক সুবিধাসহ সাশ্রয়ী মূল্যে প্রকল্পে প্লট কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, তারা এখন পর্যন্ত ৩.৫ কাঠা এবং ৭.৫ কাঠার প্লট বিক্রি করছেন, যার সবই আবাসিক প্লট। ১০ কাঠার কিছু প্লট পরে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হবে বলে জানান তারা।