নীলক্ষেতের অবৈধ ১৮৮টি দোকান উচ্ছেদ
রাজধানীর নীলক্ষেত এলাকার রোডসাইড মার্কেটের (তুলা মার্কেট) ১৮৮টি দোকান অবৈধভাবে গড়ে তোলায় তা ভাঙতে শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। তিনতলা দুটি ভবনের এ মার্কেটের উপরের দুই তলা এবং নিচতলার বর্ধিত অংশ অবৈধভাবে নির্মাণ করায় তা ভেঙে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ সিটি।
রবিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুনিরুজ্জামান এর নেতৃত্বে ২৬নং ওয়ার্ডস্থ নীলক্ষেত তুলা মার্কেটে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
তবে দোকান মালিকরা বলছেন, ২০১২ সালে তাদেরকে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বৈধভাবে দোকানগুলোর অস্থায়ী বরাদ্দ দিয়েছিলেন। যেখানে তারা নিজেদের খরচে দোতলা এবং তিনতলার নির্মাণ কাজ করে দোকান দেন। এছাড়া অনেক দোকান মালিকই মার্কেটটি ২০১৪ সালে চালু হওয়ার পরে বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের থেকে ১৫-৩০ লাখ টাকায় কিনে নেন। তাদের দাবি ভবনটি ভাঙা হলেও তাদেরকে যেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বলছে, অস্থায়ীভাবে বরাদ্দ দিলেও আগের মেয়রের সময়কালে তা বাতিল করা হয়। এছাড়া ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ এবং দোকানগুলো অবৈধ হওয়ায় দোকানগুলো ভেঙে দেওয়া হবে।
রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে ভবন দুটির দ্বিতীয় এবং তৃতীয় তলার পাশাপাশি নিচ তলার অনেক দোকানেরও মালামাল সরিয়ে নেয় দোকানিরা। সকালে দোকানের ভিতরের বিভিন্ন কাঠামো এবং দেয়ালের কিছু অংশ ভাঙা শুরু করলে রাস্তায় যানজট লেগে গেলে কাজ দুপুর ৩টা পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়। পরে ৩টার দিকে একটি হুইল এক্সাভেটর দিয়ে দুইতলার সামনের অংশ ভাঙা শুরু করে।
এসময় বেশ কয়েকজন দোকান মালিক কান্না ও আর্তনাদ করেন। তাদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশন অনেকটা জেদের বশেই দোকানগুলো ভাঙছে। আর এজন্য বিনিয়োগকারীদের মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি অনেকের ব্যবসা বন্ধেরও উপক্রম হয়েছে বলে দাবি তাদের।
মার্কেটটির দোতলায় ৮০ বর্গফুটের একটি দোকান ছিল মার্জিয়া আক্তারের। তিনি ২০১৬ সালে দোকানটি ১৮ লাখ টাকার বিনিময়ে বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তির থেকে কিনে নেন। এতোদিন দোকানের কক্ষটি একটি কোচিং সেন্টারের কাছে ভাড়া দেওয়া ছিল।
মার্জিয়া আক্তার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমি দোকানটি কেনার সময় দোকানের মালিক আমাকে তার বরাদ্দ নেওয়ার সকল কাগজপত্র দিয়েছেন। যদি ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণও হয়ে থাকে তবে নতুন করে ভবন তুলে আমাদের যেন দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়। মাসে ৮ হাজার টাকা ভাড়া পেতাম, এখন আমার দোকানও গেল, উপার্জনও নেই।'
এখানে দোকান তোলার অনুমতি পেয়ে ২০১২ সালে প্রায় ৬ লাখ টাকা দিয়ে ভবনের কাজ শেষে ২০১৪ সালে ১২০ বর্গফুটের একটি দোকান পান মোহাম্মদ আলী। তিনি টিবিএসকে বলেন, 'আমার আগে একটি দেকান ছিল দোতলায়। পরে আমার পরিবারের ৮টি দোকান হয় এখানে। বাকিগুলো ১০ থেকে ২৫ লাখ টাকায় কেনা হয় যার সকল কাগজপত্র আছে। সিটি কর্পোরেশনের থেকে বরাদ্দ নিয়েই আমরা ২০১৪ সালে ভবনের কাজ শেষ করে এখানে উঠি। হঠাত করে গত মঙ্গলবার জানিয়েছে দোকানগুলো ভেঙ্গে দিবে। আমি সব মালামাল নিতেও পারিনি। আমার ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া আছে, আমি তো এখন পথের ফকির হয়ে গেলাম।'
দক্ষিণ সিটি বলছে, এ মার্কেটের ১ম তলায় শুধু ৩৫টি দোকানই বৈধ। এছাড়াও তিন তলা মার্কেটের ২য় ও ৩য় তলা ৭৫টি করে মোট ১৫০টি এবং ১ম তলায় বৈধ ৩৫টি দোকানের সাথে অবৈধভাবে ৩৮টি দোকান সম্প্রসারণ ও নির্মাণ করা হয়। সবমিলিয়ে তুলা মার্কেটে মোট ১৮৮টি অবৈধ দোকান রয়েছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান টিবিএসকে বলেন, মার্কেটের বৈধ ৩৫টি দোকানের উপর ভিত্তি করে একটি অসাধু চক্র নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১৮৮টি অবৈধ দোকান নির্মাণ ও সম্প্রসারণ করেছে। অভিযানে ১ম তলার বৈধ ৩৫টি দোকান বাদে বাকী সকল অবৈধ দোকান ভেঙে ফেলা হবে।
যারা অবৈধভাবে দোকান বরাদ্দ দিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দক্ষিণ সিটি অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে আসছে এবং এর সাথে যদি কেউ জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিবে দক্ষিণ সিটি।
তিনি আরও বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কোনো কার্যক্রম চালানোর সুযোগ নেই। যাদের বৈধ কাগজ আছে এবং আদালতের নির্দেশ মেনেই বৈধ দোকানগুলোর জন্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে।
তিনি জানান, ভাঙার কাজ শেষ করতে ৭ নভেম্বর অভিযান চালাবেন ডিএসসিসি এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আফিফা খান। মার্কেটটির নিচ তলার পেছনের কিছু অংশও ও সামনে প্রায় চার ফুট কার্নিশও ভাঙা হবে।