ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীদের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া চক্র শনাক্ত, মূলহোতা সহ গ্রেপ্তার ৪
সম্প্রতি ঢাকার বেশকিছু এলাকায় ক্রেডিট কার্ড থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীরা। এসব অভিযোগ তদন্ত করে একটি চক্রকে শনাক্ত করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পরে চক্রটির মূলহোতা ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি সাইবার উত্তরের একটি দল।
ডিবি সাইবার বলছে, চক্রটি সিঙ্গার, ওয়ালটনসহ বিভিন্ন কোম্পানীর হেড অফিসের কর্মকর্তা পরিচয়ে এসব কোম্পানীর শোরুমে ফোন করে ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন করেছে এমন গ্রাহকদের তথ্য জানতে চায়। এরপর হোয়াটস অ্যাপে গ্রাহকদের কার্ডের তথ্য নিয়ে নেয়। পরে ব্যাংক কর্মকর্তা পরিচয়ে ওটিপি পাঠিয়ে কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নেয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার কালামৃধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ রেজাউল মাতুব্বর, নাঈম হোসেন, দিদার মুন্সী এবং মোঃ জাহিদুল খান। তাদেরকে শুক্রবার (১১ নভেম্বর) ঢাকা, ফরিদপুর ও নারায়ণগঞ্জের একাধিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। এই জালিয়াত চক্রের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ নানা শ্রেণীপেশার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী। রাজধানীর বিভিন্ন থানায় করা পাঁচটি মামলা এবং একাধিক জিডি রয়েছে।
ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের এডিসি ফজলুর রহমান টিবিএসকে রবিবার (১৩ নভেম্বর) এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, 'বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড ব্যাবহারকারীরা চক্রটির ফাঁদে পড়ে টাকা হারিয়ে অভিযোগ করেন। এসব অভিযোগের তদন্ত করে আমরা ইউপি চেয়ারম্যানের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। পরে সহযোগীসহ তাকে গ্রেপ্তার করেছি। এ চক্রে আরও কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখছি।'
গ্রেপ্তারকৃত চেয়ারম্যন রেজাউল প্রায় ১৭ বছর ধরে প্রতারক চক্র নিয়ন্ত্রণ করছে। তার বিরুদ্ধে ১টি মাদক এবং ৪টি প্রতারণার মামলা আছে। দিদারকে দিয়ে কার্ড প্রতারণার যাবতীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে রেজাউল। তার নামে ডিজিটাল আইনে ২টি মামলা রয়েছে। চক্রের অন্য সদস্যদের মধ্যে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হলো নাইম হোসেন এবং জাহিদুল খান। নাঈমের নামে ডিজিটাল আইনের একটি মামলা চলমান।
ডিবি জানায়, ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের তথ্য পাওয়ার পর গ্রাহকদের কার্ডের ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ফোন করে বলে, 'আপনার কার্ডের নিরাপত্তার জন্য পিন কোড ৪ ডিজিট থেকে ৬ ডিজিট করা প্রয়োজন'। গ্রাহকরা সরল বিশ্বাসে পিনকোড পরিবর্তনের জন্য বর্তমান পিনসহ কার্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ও কার্ডের সিভিবি নম্বর দেয়।
এরপর চক্রটি এমএফএসের অ্যাড মানি অপশনে গিয়ে গ্রাহকের কার্ডের তথ্য দেয়। পরে একটি ওটিপি গ্রাহকের নম্বরে গেলে গ্রাহককে সেটি প্রদান করতে বলে। গ্রাহক তার কার্ডের পিন কোড পরিবর্তনের আশায় ওটিপিটি দেয়ার পর কার্ডের টাকা এমএফএস নম্বরে ট্রান্সফার করে নেয় চক্রটি। পরে আসামীরা কয়েকটি ধাপে বিভিন্ন এজেন্ট পয়েন্ট হতে ক্যাশ আউট করে নেয়।
এমএফএস প্রতারণায়ও তারা
চক্রটির সদস্যরা অভিনব কৌশলে দীর্ঘদিন ধরে এমএফএস গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তারা বিকাশসহ অন্য প্রতিষ্ঠানের এসআরদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা পরিচয়ে এজেন্ট এবং গ্রাহকদের অ্যাপ চালুর কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করে।
এজন্য তারা 'আইটেল হাইব্রিড মোবাইল ডায়লার অ্যাপ'-এ এসআরদের নম্বর বসিয়ে কল দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কমকর্তা কথা বলবেন বলে জানায়। পরে একই অ্যাপস ব্যবহার করে বিকাশের হটলাইন নম্বর +১৬২৪৭ নম্বর হতে কল করে তাদের চাহিদামত তথ্য সংগ্রহ করে এমএফএস একাউন্ট থেকে কথা চলাকালীন সময়েই টাকা হাতিয়ে নেয়।