নৌযান শ্রমিকদের লাগাতার কর্মবিরতি, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাস বন্ধ
চট্টগ্রাম থেকে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের চলমান কার্যক্রম বন্ধ সহ ১০ দফা দাবিতে নৌপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ।
২৬ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে নৌযান শ্রমিকদের লাগাতার কর্মবিরতি। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাস কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
প্রায় ১৬০০টি লাইটারেজ জাহাজ নদীপথে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গর থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে পণ্য পরিবহন করে। এই পণ্যের মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট, সিরামিকস ও ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল, সার, কয়লা ও ভোগ্যপণ্য। লাইটার জাহাজে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম থেকে সারা দেশে নদীপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নবী আলম বলেন, শনিবার মধ্যরাত থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লাইটার জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্দরের বহির্নোঙরে রাখা বড় জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে সাধারণ শ্রমিকরা। একইসঙ্গে মাঝিরঘাট ও সদরঘাট এলাকার ১৮টি বেসরকারি ঘাটেও লাইটার জাহাজে করে পণ্য খালাসের কাজ বন্ধ রয়েছে।
লাইটার জাহাজ মালিকদের সংগঠন ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশিদ খান বলেন, "স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০টি লাইটার জাহাজ বরাদ্দ দেয় ডব্লিওটিসি। নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে আজ (রবিবার) কোন জাহাজ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।"
শ্রমিকদের ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- নৌযান শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক প্রদানসহ শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ, খাদ্য ভাতা ও সমুদ্র ভাতার সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড ও নাবিক কল্যাণ তহবিল গঠন করা, দুর্ঘটনা ও কর্মস্থলে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা, চট্টগ্রাম থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরবরাহে দেশের স্বার্থবিরোধী অপরিণামদর্শী প্রকল্প বাস্তবায়নে চলমান কার্যক্রম বন্ধ করা, বালুবাহী বাল্কহেড ও ড্রেজারের রাত্রিকালীন চলাচলের উপরে ঢালাও নিষেধাজ্ঞা শিথিল, নৌপথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ডাকাতি বন্ধ, ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস প্রদানসহ ভারতীয় সীমানায় সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করা, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন নীতিমালা শতভাগ কার্যকর করে সকল লাইটারিং জাহাজকে সিরিয়াল মোতাবেক চলাচলে বাধ্য করা, চরপাড়া ঘাটে ইজারা বাতিল ও নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের সব ধরনের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা বন্ধ করা।
এর আগে, লাইটার জাহাজের শ্রমিকদের ওঠানামায় ব্যবহৃত চরপাড়া ঘাটের ইজারা বাতিল, সাঙ্গু নদের মুখ খনন করে লাইটার জাহাজের নিরাপদ পোঁতাশ্রয় করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে গত ১০ নভেম্বর ভোর ৬টা থেকে চট্টগ্রামে লাইটার জাহাজে পণ্য পরিবহনের কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল লাইটার জাহাজ শ্রমিকেরা।
পরে পতেঙ্গায় লাইটার জাহাজের শ্রমিকদের ওঠানামায় ব্যবহৃত চরপাড়া ঘাটের ইজারা বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু ও শ্রমিকদের কাছ থেকে ঘাটে টাকা না নেয়ার সিদ্ধান্ত আসায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে ফিরে লাইটার জাহাজ শ্রমিকরা।