মাটির স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে নতুন প্রযুক্তিও ভালো ফল দেবে না: কৃষিমন্ত্রী
অতিরিক্ত ফসল ফলানোর চাপের কারণে প্রতিনিয়তই মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। মাটির ক্ষয়, অম্লতা, বন উজার, পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি এবং সার ব্যবহারের ঘাটতিও উর্বরতা কমাতে ভূমিকা রাখছে।
সোমবার খামারবাড়ির কেআইবি মিলনায়তনে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস-২০২২ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. এস এম বখতিয়ার।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, মাটিতে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক ও বোরনের ঘাটতি রয়েছে। এর মধ্যে ৫০ ভাগ কৃষিজমিতেই ফসফরাসের ব্যপক ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া প্রায় ২১% জমিতে ফসফরাস রয়েছে মাঝারি স্তরে।
৫৭% জমিতে অতিমাত্রায় এবং মাঝারি স্তরের ঘাটতি রয়েছে পটাশিয়ামের। ৪০% জমির সালফার মাত্রা খুবই নিম্ন থেকে নিম্নসীমার মধ্যে রয়েছে। ২১% জমিতে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি রয়েছে। জিঙ্ক ও বোরনের ঘাটতি রয়েছে ৪৫% ও ৫২% জমিতে।
পুষ্টি ঘাটতির কারণে ভবিষ্যতে নিরাপদ খাবারের উৎপাদনও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানান ড. এস এম বখতিয়ার।
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার মো. নাজমুল হাসান বলেন, 'এখন প্রায় ৪৫ শতাংশ জমিতে এসিডিটির (অম্লতা) সমস্যা রয়েছে। এটা একটা বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে।'
তিনি বলেন, 'বেসরকারি খাত যেসব সার বিক্রি করছে সেগুলোতে প্রচুর ভেজাল হচ্ছে। এটাও মাটির উর্বরতা কমিয়ে দিচ্ছে।'
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'অধিক ফসলের জন্য সার ব্যবহার করছেন, সেটার জন্য মাটির স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশের মাটির স্বাস্থ্য ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। মাটির স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ভালো ফল দেবে না।'
তিনি বলেন, 'ফসলের উৎপাদন বাড়াতে সার লাগবে, প্রযুক্তিও লাগবে। তবে সবকিছুর সঠিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। দেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা মাটির সঠিক ব্যবস্থাপনায় অত্যন্ত দুর্বল ভূমিকা পালন করছেন।'
কৃষিমন্ত্রী বলেন, 'ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন। নতুন নতুন প্রযুক্তির জন্য মাটির কী ধরনের ক্ষতি হচ্ছে সে ধারণা নিন। কয়েক বছর আগে নতুন প্রযুক্তি ভার্মিকম্পোস্ট এসেছে। আমি অনেক বিজ্ঞানীকে জিজ্ঞেস করেছি এতে নাইট্রোজেনের মাত্রা কত? জানেন না। সেটা খুব দুঃখজনক। মাটি নিয়ে কাজ করেন এমন বিজ্ঞানী যদি ভার্মিকম্পোস্টে নাইট্রেজেনের মাত্রা সম্পর্কে না জানেন সেটা হয় না।'
তিনি বলেন, 'মাঠের সাথে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার কোনো সম্পর্ক নেই। হাতে কলমে শিক্ষা নিতে হবে। কারিকুলামে পরিবর্তন আনতে হবে, যাতে মাটির বিষয়গুলো সেখানে পড়ানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদেরকে আমি বলবো তারা যেন দ্রুত এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।'
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেই বিসিএসের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। কয়েকটি নোট পড়ে কোনভাবে ডিগ্রি নিয়ে আসছে। আমি বলছিনা সবাই সেটা করছে। তবে অধিকাংশই করছে। অনেকে যখন ভাইভা দিতে আসছে তখন তাদেরকে ২০টা অ্যামাইনো অ্যাসিডের নাম জিজ্ঞেস করলে ৫টাও বলতে পারছে না। সবাই সরকারি চাকরি নিতে ব্যস্ত। মানে মাস গেলে বেতন। কোন দায়িত্ব নেই। এ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।'