জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ সকালে তিনি ঢাকার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে জিটুজি ব্যবস্থার অধীনে প্রথম অর্থনৈতিক অঞ্চলটির উদ্বোধন করেন।
আড়াইহাজারের বিশেষ এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন, সুমিতোমো কর্পোরেশনের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মাসায়ুকি হায়োদো এবং বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকিসহ আরও অনেকে।
জোনটি সম্পূর্ণরূপে চালু হলে প্রায় এক লাখ লোকের জন্য ১.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের আশা করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ বলেন, "অর্থনৈতিক অঞ্চল জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রযুক্তি হস্তান্তরকে সহজতর করবে। এছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি পৃথক ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার স্থাপন করা হবে।"
অর্থনৈতিক অঞ্চলে বাংলাদেশ সরকার এবং জাপানের অংশীদারিত্ব সম্পর্কে তিনি উল্লেখ করেন, এখানে বেজার শেয়ার ২৪%, জাইকার ১৫% এবং সুমিতোমো কর্পোরেশনের শেয়ার ৬১%।
বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোন (বিএসইজেড) সূত্রে জানা গেছে, জাপানি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
বিএসইজেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারো কাওয়াচি বলেন, "এটি হবে একটি পরিবেশবান্ধব আধুনিক অর্থনৈতিক অঞ্চল। আগামী বছরের শেষ নাগাদ বেশ কয়েকটি কোম্পানি এখানে তাদের পণ্য উৎপাদন শুরু করবে।"
দেশি-বিদেশি যেকোনো কোম্পানি এই জোনে বিনিয়োগ করতে পারবে। ইতোমধ্যেই ৪০টি বিদেশি কোম্পানি এখানে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যার মধ্যে জাপানি কোম্পানি ৩০টি, বলেন তিনি।
তুর্কি কোম্পানি আরসেলিক এবং জার্মান কোম্পানি রুডলফের সাথে যৌথ উদ্যোগে সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড ইতোমধ্যে এখানে তাদের কারখানা নির্মাণ শুরু করেছে। ৪০ একর জমি নির্ধারণ করে তারা, যার মধ্যে সিঙ্গার একাই পেয়েছে ৩৫ একর জমি।
বহুজাতিক ইলেকট্রনিক্স এবং হোম অ্যাপ্লায়েন্স ফার্মটি ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ ৭৮ মিলিয়ন ডলারের গ্রিন ফ্যাক্টরিতে উৎপাদন শুরু করার অপেক্ষায় রয়েছে। প্রাথমিকভাবে তারা প্ল্যান্ট থেকে রপ্তানির সুযোগ কাজে লাগানোর পাশাপাশি দ্রুত বর্ধনশীল স্থানীয় বাজারকে লক্ষ্য করে এগিয়ে যেতে চায়।
বেজা সূত্রে জানা গেছে, এই অঞ্চলে ১০ একর করে জমি নির্ধারণের জন্য জাপানের ওন্ডা কর্পোরেশন এবং নিক্কা কেমিক্যালস ৬ ডিসেম্বর বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এদের মধ্যে, ওন্ডা গ্যাস মিটার উৎপাদন করবে এবং নিক্কা রাসায়নিক উৎপাদন করবে।
বেজা এবং জাপানের সুমিতোমো কর্পোরেশন যৌথভাবে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে কাজ করছে। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের পর এ অঞ্চল নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ওই সফরের পর জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের বাংলাদেশ সফরের সময় বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচিত হয়েছিল।
২০১৬ সালে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হাতে নেয় এবং একই বছর জাপান সরকার বিশ্ববিখ্যাত সুমিতোমো কর্পোরেশনকে ডেভেলপার হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করে।
২০১৮ সালে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষার পর নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে একটি জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের পক্ষে মতামত দেয় জাইকা।
যৌথ উদ্যোগের এ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য ২০১৯ সালে বেজা এবং সুমিতোমো কর্পোরেশনের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ বলেন, বেজা ২০১৯ সালে প্রস্তাবিত এলাকায় জমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু করে।
তিনি বলেন, "অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সংযোগ সড়ক, রিটেনশন পুকুর এবং বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নির্মাণসহ ৫০০ একর জমির উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রথম পর্যায়ের কাজ প্রায় শেষের দিকে।"
তাছাড়া, অভ্যন্তরীণ সড়ক, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের লাইন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য এ পর্যন্ত ১৮০ একর উন্নত জমি বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি জমিগুলো শিগগিরই হস্তান্তর করা হবে বলে জানান শেখ ইউসুফ।