গুম হওয়া বিএনপি নেতার বাসায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত, হট্টগোলের পর অধিকতর নিরাপত্তার আশ্বাস পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
অধিকতর নিরাপত্তা চাইলে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর শাহীনবাগে বিএনপির নিখোঁজ নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস যাওয়ার পর বাসার ফটকের বাইরে হট্টগোলের বিষয়ে তিনি এ কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সেন্টারে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের মোমেন বলেন, "আজকে হঠাৎ করে জরুরি ভিত্তিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আমার সাথে সাক্ষাত করে বললেন তিনি এক বাসায় গিয়েছেন। সেখানে অনেক লোক ছিল, তারা কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলো বলে জানান তিনি।"
"ওনার সিকিউরিটির লোকেরা ওনাকে দ্রুত সেখান থেকে চলে যেতে বলে। জড়ো হওয়া লোকেরা তার গাড়ি ব্লক করে দেবে এমন আশঙ্কা থেকে এ কথা বলে তারা," যোগ করেন মোমেন।
তিনি বলেন, "সেই নিরাপত্তা অনিশ্চয়তাতে তিনি তাড়াতাড়ি চলে যান। এতে তিনি খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আমি ওনাকে বললাম আপনার নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব আমাদের।"
বিএনপির ঢাকা মহানগরের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির (বর্তমানে ঢাকা উত্তরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সাজেদুল ইসলাম। ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর থেকে তিনি নিখোঁজ। ঘটনার পর পরিবারের সদস্যরা দাবি করে আসছেন, সাজেদুলকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত সেখানে পৌঁছালে সেখানে 'মায়ের কান্না' নামক একটি সংগঠনের লোকজন বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে, তবে তিনি কথা বলেননি বলে সূত্র জানায়।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "আমি বলেছি যে আপনার উপর বা আপনার লোকের উপর কেউ আক্রমণ করেছে? উনি বললেন না। আমি বলেছি আপনি এবং আপনার লোকজনকে আমরা নিরাপত্তা দেব। আপনি যদি অধিকতর নিরাপত্তা চান আমরা দেব।"
"তবে উনি যে সেখানে গেছেন এই তথ্যটা প্রকাশ কে করেছে, তার উত্তর উনি দিতে পারেননি।"
মোমেন আরো বলেন, "আমি বললাম, আমি মিডিয়াকে আটকাতে পারব না। আমাদের দেশের মিডিয়া খুব সোচ্চার। আপনারা যদিও বলেন ফ্রিডম অব স্পিচ নেই, কিন্তু আমাদের মিডিয়া খুব সোচ্চার।"
"আমি তাদের দূরে রাখতে পারি, আপনি যদি চান ১০ফিট, ১৫ ফিট দূরে রাখতে পারি। আমি সেটা পারব। কিন্তু আমি তাদের কোথাও বাধা দিতে পারব না।"
তিনি আরো বলেন, "ওখানে যেসব লোকজন গেছে, সে লোকজনকেও আমি বাধা দিতে পারব না। আমি যেটা করব সেটা হলো আপনার প্রটেকশনের জন্য আমরা তাদের দূরে রাখব।"
"আর যদি আপনার উপরে কোনো আক্রমণ হয়ে থাকে কিংবা আপনার লোকের উপরে কেউ আক্রমণ করে থাকে, অ্যাসল্ট করে, পাবলিক প্রপার্টি, প্রাইভেট প্রপার্টি কেউ যদি ধ্বংস করে তাহলে আমি তাকে গ্রেপ্তার করতে পারব। কিন্তু তাছাড়া আমি তাকে কিছু করতে পারব না।"
সাজেদুলের বোন সানজিদা ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, "মার্কিন রাষ্ট্রদূত আসবেন জেনে তেজগাঁও থানার ওসি অপূর্ব হাসানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল দুই দিন আমাদের বাসায় আসেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত আমাদের বাসায় প্রবেশের ৪০ মিনিট আগে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা–কর্মী ও মায়ের কান্না সংগঠনের লোকজন রাস্তার ওপর অবস্থান নেন।"
"বাসা থেকে বেরিয়ে যখন তিনি গাড়িতে উঠছিলেন, তখন তারা কথা বলার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে হট্টগোলও হয়। পরে তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থানা–পুলিশ সদস্যদের সহায়তায় তিনি গাড়িতে উঠে চলে যান।"
সানজিদা জানান, নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নিয়েছেন দূত। "আমরা এখন কী চাই, সেটাও তিনি জানতে চেয়েছেন। আমরা তাকে ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছি।"
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেন, "শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে না গিয়ে পিটার হাস মায়ের কান্না সংগঠনের সমন্বয়কারীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। আমি তার কাছে জানতে চাই- আপনার দেশে প্রতি মাসে কত মানুষ গুম হয়? আমাদের কাছে ইতোমধ্যেই সিএনএন এর পরিসংখ্যান রয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করার আগে পিটার হাসকে গুম ও হত্যার প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে।