৩ দিনের ছুটিতে কক্সবাজারে উপচে পড়া ভিড়, পর্যটকদের থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ
পর্যটক বাড়লে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত নগরী কক্সবাজারে আবাসিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, রেস্তরাঁসহ যানবাহন খরচ বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ নতুন কিছু নয়। প্রতিবারের মতো এবারও সমুদ্রে বেড়াতে আসা পর্যটকরা স্থানীয় হোটেল, গেস্ট হাউস ও পরিবহন চালকদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।
শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে রোববার বড়দিনের ছুটি যোগ হওয়ায় কর্মজীবীরা টানা ৩ দিনের ছুটি পেয়ছেন। এই ছুটিতে উপচে পড়া ভিড় দেখা দিয়েছে কক্সবাজারে।
জেলার পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মতে, এই ছুটিতে কক্সবাজারে গড়ে ২ লাখ করে ৬ লাখ পর্যটক সমুদ্র ভ্রমণে এসেছেন। অথচ জানা যায়, কক্সবাজারের সব আবাসিক হোটেলের মোট ধারণক্ষমতা ১ লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজারের মতো। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির মৌসুমী ব্যবসায়ী, মধ্যস্বত্তভোগী এবং অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যটকদের কাছ থেকে হাতিয় নিচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।
ছুটির দিনে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা বেশ কয়েকজন পর্যটকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়কে পুঁজি করে হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, রেস্তরাঁ ও যানবাহন চালকেরা অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে। আর টাকার তুলনায় সেবা ও খাবারের মান মোটেই সন্তোষজনক নয়।
রাজধানী ঢাকা থেকে আসা চাকুরিজীবী তরুণ মাহাদুল আবসার জানান, এর আগেও কয়েকবার কক্সবাজারে এসেছেন তিনি। তবে এবারের অভিজ্ঞতা একেবারেই ভিন্ন। হোটেলের ভাড়া নেওয়া হয়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু সার্ভিস আগের মতো পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে অভিযোগ দিলে হোটেল কর্তৃপক্ষ বলেছে, "থাকলে থাকেন, না থাকলে চলে যান।"
পর্যটন সেবা অন্তত এমন হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন এই পর্যটক।
জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এক পর্যটক জানান, গত ২ দিন ধরে যে সব রেস্তরাঁয় তিনি খেয়েছেন সব ক'টিতেই অতিরিক্ত দাম রাখা হয়েছে। সে তুলনায় খাবারের মানেও সন্তুষ্ট নন তিনি।
কুমিল্লার এক পর্যটক জানান, পর্যটকের চাপ বেশি থাকায় হোটেলে ৩ হাজার টাকার রুমের ভাড়া এখন নেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার টাকা। অতিরিক্ত পর্যটকের ভিড়ে উপায়অন্ত না পেয়ে বাধ্য হয়েই গুনতে হচ্ছে বাড়তি হোটেল ভাড়া।
যানবাহন ভাড়াও নেওয়া হচ্ছে বেশি। কক্সবাজারের কলাতলী থেকে হিমছড়ির দূরত্ব ১০ কিলোমিটারের কিছু বেশি মন্তব্য করে রফিক নামের এক পর্যটক জানান, হিমছড়ি যাওয়া-আসার জন্য একটি জিপ গাড়ি ভাড়া নিতে হচ্ছে ৬ হাজার টাকায়। যদিও স্বাভাবিক সময়ে এই ভাড়া ২ হাজার টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।
এছাড়া, শহরের ভেতরে যাতায়তের ক্ষেত্রে ইজিবাইক, অটোরিকশা, রিকশা চালকরাও পর্যটকদের থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ অনেকের। এ ব্যাপারে তারা জেলা প্রশাসনের নজরধারীর দাবি জানান।
বৃহত্তর বিচ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সদস্য আব্দুর রহমান জানান, "কক্সবাজারের আবাসিক হোটেলে ধারণক্ষমতা ১ লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার মানুষের। আর এখন তার অতিরিক্ত পর্যটক কক্সবাজার এসেছেন। প্রতিবারই ছুটিকে কেন্দ্র করে মৌসুমী ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্তভোগী তৈরি হয়। তারা কৌশলে হোটেলের কিছু রুম অগ্রীম বুকিং দিয়ে রাখেন। পর্যটকরা আসলে অতিরিক্ত মূল্যে তা বিক্রি করেন। ফলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগটি বারবার আলোচনায় আসে।"
তিনি বলেন, "ছুটিতে ভ্রমণ না করে, ভ্রমণের জন্য ছুটি নেওয়া উচিত। কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের আসার আগে হোটেল রুম নিশ্চিত করা জরুরি। আর ধারণক্ষমতার বেশি পর্যটক আসে এমন সময় ভ্রমণে আসা উচিত নয়।"
বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতি কক্সবাজার জেলার সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল জানান, কক্সবাজারে তাদের সমিতিভুক্ত রেস্তোরার সংখ্যা ১৩৪। এসব প্রতিষ্ঠানের টেবিলে-টেবিলে, দৃশ্যমান স্থানে খাবার মূল্যসহ তালিকা প্রদর্শন করা আছে। এরা কোনোভাবে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে, তা জেলা প্রশাসনকে জানানোর অনুরোধ করেন তিনি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান জানান, পর্যটকদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে জরিমানা আদায় করেছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষে কলাতলী ডেলফিন মোড়ে অভিযোগ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। যদি কোনোভাবে কেউ হয়রানির শিকার হন, তাহলে সেখানে অভিযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, "সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পেলে, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই হয়রানির শিকার হলে অভিযোগ জানাতে হবে।