ট্যাক্স রেট কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন শীর্ষ করদাতারা
করের হার কমিয়ে আনলে আরো বেশি সংখ্যক মানুষের কাছ থেকে কর আদায় করা সম্ভব হবে এবং সরকারের কর আদায় বাড়বে বলে মনে করেন শীর্ষ করদাতাদের কেউ কেউ।
একইসঙ্গে কর প্রদানের বিদ্যমান পদ্ধতি অনেক কঠিন উল্লেখ করে, তা সহজ করার আহ্বানও জানান তারা।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শীর্ষ ১৪১ করদাতা ও ঢাকা বিভাগের আওতায় জেলাগুলোর শীর্ষ করদাতাদের হাতে পুরস্কার প্রদান করে ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ (এনবিআর)।
তৈরি পোশাক ক্যাটাগরিতে শীর্ষ করদাতাদের মধ্যে পুরস্কার পাওয়া একজন স্নোটেক্স আউটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম খালেদ।
পুরস্কার প্রদান শেষে দ্য বিজনেস স্ট্যান্টার্ডকে তিনি বলেন, "ট্যাক্স রেট যত কম করা যাবে, তত বেশি সংখ্যক মানুষ কর দিতে আগ্রহী হবে। এছাড়া কর প্রদান পদ্ধতিও ইজি করা দরকার। কর দিতে গিয়ে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। এটি সহজ হলে মানুষ কর প্রদানে উৎসাহিত হবেন।"
এনবিআর আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, "এখনো করদাতাদের কর প্রদানের ক্ষেত্রে জটিলতা আছে। সবক্ষেত্রে অটোমেশন করার লেভেলে যাইনি এখনো। উন্নত দেশগুলোর সমকক্ষে পৌঁছাতে পারিনি। তবে গত ১০ বছরে অনেক উন্নয়ন হয়েছে।"
এ সময় শীর্ষ করদাতা হিসেবে খেলোয়াড় ক্যাটাগরিতে সাকিব আল হাসান, সাংবাদিক ক্যাটাগরিতে শাইখ সিরাজ ও ডাক্তার ক্যাটাগরিতে ড. প্রাণ গোপাল দত্ত বক্তব্য দেন।
গত কয়েক বছরে এনবিআর বিপুল সংখ্যক মানুষকে করের আওতায় এনেছে। গত ১০ বছর আগে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বরধারী (টিআইএন) ছিলো ২০ লাখের মত। বর্তমানে ওই সংখ্যা চার গুণের বেশি বেড়েছে।
অবশ্য টিআইএনধারী বাড়লেও বছর বছর আয় ব্যয়ের হিসাব জমা দেওয়া তথা ট্যাক্স রিটার্ন জমা সে হারে বাড়ছে না। সবশেষ গত ২০২১-২২ অর্থবছরেও রিটার্ন জমা হয়েছে ২৫ লাখের মতো।
এছাড়া বাংলাদেশের জিডিপিতে রেভিনিউ'র অবদান (ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও) এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন।
বুধবার এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতেমা ইয়াসমীন বলেন, "আমাদের ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। তবুও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি তা বাড়ানোর জন্য।"
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম বলেন, "করপ্রদান পদ্ধতি সহজ করতে হবে, নইলে ট্যাক্স নেট বাড়বে না।"
এছাড়া বাড়ি, গাড়ির মালিক কিংবা সেভিংস ইন্সট্রুমেন্টে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সঠিক কর আদায় করতে সেকেন্ডারি সোর্স ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বুধবার জাতীয় পর্যায়ের ১৪১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ঢাকা বিভাগের আওতাধীন জেলাগুলোর ৬৫ ব্যক্তিকে একই অনুষ্ঠানে সম্মাননা দেওয়া হয়।
এছাড়া প্রতিটি সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পর্যায়ে শীর্ষ করদাতা, দীর্ঘমেয়াদী, নারী ও তরুণ করদাতা মিলিয়ে ৭ জন করে করদাতাকে সম্মাননা দেওয়া হয় স্ব স্ব বিভাগে আনুষ্ঠানিকভাবে।
১ জানুয়ারি কর প্রদানের শেষ দিন
৩০ নভেম্বরের পর এক মাস সময় বাড়ানোর পর ৩১ ডিসেম্বর আয়কর দিবস অনুষ্ঠিত হওয়া কথা। অর্থাৎ ওই দিনই কর প্রদানের শেষ দিন।
তবে নিয়ম অনুযায়ী, শেষ দিন সরকারি ছুটি থাকলে পরবর্তী কর্মদিবস ট্যাক্স ডে হিসেবে ঘোষিত হয়।
সেই হিসেবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর শনিবার হওয়ায় পরবর্তী দিন রোববার বা ১ জানুয়ারি সুদ ছাড়া কর পরিশোধ করা যাবে।