পদ্মা সেতুতে চালু হলো অত্যাধুনিক ওজন পরিমাপক যন্ত্র
যান চলাচলের জন্য পদ্মাসেতু খুলে দেওয়ার ৬ মাস পর প্রথমবারের মত বসানো হল ওজন পরিমাপক যন্ত্র। এতে সেতুর ওপর দিয়ে অধিক পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
আজ থেকে প্রতিটি পণ্যবাহী যানবাহনকে পরিমাপ শেষেই পার হতে হচ্ছে পদ্মা সেতু।
সেতুর জাজিরা ও মাওয়া প্রান্তে তিনটি করে মোট ৬টি পরিমাপক যন্ত্র বসানো হয়েছে।
২৭ টনের বেশি ওজনের পণ্যবাহী পরিবহন পারাপারে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
পদ্মা সেতু দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৪ হাজার ৭৬৪টি যানবাহন চলাচল করে। এতে গড়ে ২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ৮১৩ টাকা টোল আদায় করছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
বিপুল সংখ্যক গাড়ি চলাচল করলেও অতিরিক্ত ওজনের গাড়ি নিয়ন্ত্রণে এতদিন ছিল না কোন ব্যবস্থা। এতে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা ছিল সেতুর স্থায়ীত্বে।
নির্ধারিত ওজনের পণ্যবাহী যানবাহন গ্রিন জোন দিয়ে টোল প্লাজার দুইটি বুথে টোল পরিশোধ করে সেতু পার হবে। আর বেশি ওজনের গাড়ি রেড জোন দিয়ে চলে যাবে স্টক ইয়ার্ডে।
যানবাহন সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে পারবে ইয়ার্ডে। অতিরিক্ত মালামাল রাখার সময়সীমা ৭দিন পর্যন্ত।
এছাড়া উভয় প্রান্তে নির্মাণ হয়েছে দুইটি ড্রাইভার শেড ও ৮টি গার্ড পোস্ট।
গত ২৫ জুন উদ্বোধনের পরদিনই যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় পদ্মা সেতু। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রী এবং পণ্যবাহী যানবাহন পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচল করছে।
বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দর এবং মোংলা সমুদ্রবন্দরসহ বিভিন্ন জেলার পণ্যবাহী গাড়ি পদ্মা সেতু পারাপার হয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করছে।
উদ্বোধনের পর থেকে সেতুর উপর ওজন পরিমাপ ছাড়াই চলাচল করছে পণ্যবাহী যানবাহন।
যানবাহনের ওজন পরিমাপে দেশে প্রথমবারের মত স্থাপন করা ওয়েট স্কেল কাজ করবে ইলেকট্রিক সেন্সর সিস্টেমে। ফলে স্কেলের উপর দাঁড়াতে হবে না যানবাহনকে, চলতি পথেই হবে যানবাহনের ওজন পরিমাপ।
পদ্মা সেতুতে যেয়ে দেখা যায়, খুলনা থেকে ছেড়ে আসা মালবোঝাই কাভার্ডভ্যান আগের নিয়মেই যাচ্ছিল সরাসরি টোল প্লাজায়; কিন্তু গাড়ির গতিরোধ করে সেটিকে ওয়েট স্কেলের দিকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর কাভার্ডভ্যানটি ওজন পরিমাপ শেষে গ্রিন জোন দিয়ে টোল প্লাজার দিকে যায়।
কথা হয় গাড়ির চালক ইদ্রিস মিয়ার সাথে। তিনি টিবিএসকে জানান, "আগে তো জানা ছিল না তাই সোজাসুজি চলে যাচ্ছিলাম। এখন আর ভুল হবে না। ওজন ২৭ টনের কম ছিল বলে ছেড়ে দিয়েছে। এটা করায় ভালো হয়েছে।"
"অনেকেই অতিরিক্তি ওজন নিয়ে সেতু পারাপার হয়। এত বড় সেতু দিয়ে বেশি ওজন না নেওয়াই ঠিক। আমরা মনে করি এটা করায় সবার জন্যই ভালো হয়েছে।"
শরীয়তপুরের রড সিমেন্ট ব্যবসায়ী আমিন ট্রেডার্সের মালিক নুরুল আমিন মাদবর বলেন, "ঢাকা থেকে রড সিমেন্ট আনি। আগে ৩০ এমনকি ৩৫ টন আনতাম। এখন যন্ত্র বসানো হয়েছে ২৭ টনের বেশি আনার নিয়ম নেই। তাই আমরা নিয়ম মেনেই আনব।"
"এতে পরিবহন খরচ একটু বেড়ে যাবে কিন্তু সরকারের নিয়ম তো মানতেই হবে। আর সেতু তো আমাদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। এটা দেখে রাখা আমাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।"
পদ্মা সেতু প্রকল্পের সংযোগ সড়কের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ রজব আলী বলেন, "আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুতে পরিমাপক যন্ত্র দিয়ে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল শুরু করেছে। এতে সেতুর ওপর দিয়ে অতিরিক্ত ওজন বহনকারি পণ্যবাহি যানবাহন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে।"
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, ৫ বছর মেয়াদী চুক্তিতে ৬৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে মেকানিক্যাল ওয়েট স্কেল বসানোর কাজ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোরিয়ান এক্সক্সেসওয়ে।
এর আগে অন্য একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রপার্টি ডেভোলপমেন্ট লিমিটেড ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ মাস মেয়াদী দুটি ওয়েট স্কেলের অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ করে।