ক্লাউড কম্পিউটিং জনপ্রিয় হতেই বাজার দখলে নজর দিচ্ছে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো
নিরাপদে এবং সাশ্রয়ীভাবে ডেটা এবং ওয়েবসাইট সংরক্ষণ ও পরিচালনার উপায় হিসেবে ক্লাউড স্টোরেজ ক্রমেই বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
পুরনো স্টোরেজ সিস্টেম থেকে ক্লাউড স্টোরেজে স্থানান্তর করার ফলে আর্থিক, কর্পোরেট, শিক্ষা এবং ই-কমার্সসহ আরও বেশকিছু খাতে আরও ভালোভাবে ডেটা লস প্রতিরোধ করার পাশাপাশি সর্বনিম্ন খরচে সর্বাধিক দক্ষতা এবং ব্যবসায় নিরবচ্ছিন্ন আইটি সমাধান পাওয়া সম্ভব।
এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মতে, বর্তমানে দেশে ক্লাউড স্টোরেজের বাজারের আকার প্রায় ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; ২০২৫ সালের মধ্যে এটি ৪৬.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
যদিও আমাজন, গুগল, হুয়াওয়ে এবং ওরাকলের মতো আন্তর্জাতিক বিক্রেতারা বর্তমানে বাজারের প্রায় ৯০ শতাংশ শেয়ার নিয়ে ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে, স্থানীয় বিক্রেতারাও এখন এ বাজারের একটি বড় অংশ নিজেদের দখলে আনতে চায়।
স্থানীয় মীর ক্লাউডের হেড অফ বিজনেস তৌফিক এহসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বিগত কয়েক বছরে ব্যবসার প্রবৃদ্ধি ভালো হয়েছে এবং ভবিষ্যতও আশাব্যঞ্জক বলে মনে হচ্ছে।"
ক্লাউড স্টোরেজ প্রদানকারীরা ব্যবসায়ীদের নিজস্ব ডেটা সেন্টার নির্মাণ ও পরিচালনা ছেড়ে দিয়ে তার পরিবর্তে তাদের কম্পিউটার প্রযুক্তির ক্ষমতা ব্যবহার করতে রাজি করানোর লক্ষ্যে কাজ করেন।
স্থানীয় বাজারে মীর ক্লাউড, আমরা টেকনোলজিস লিমিটেড এবং ব্রিলিয়ান্ট ক্লাউডের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পূর্ণ ডেটা স্টোরেজসহ বিভিন্ন আইটি সুবিধা অফার করে। তাদের প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে ক্লাউড সার্ভার, স্টোরেজ, অটো স্কেলিং, ডেটা সিকিউরিটি, ডিজাস্টার রিকভারি, রিমোট এক্সেস এবং সার্বক্ষণিক গ্রাহক সেবা।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে জেনেক্সট টেকনোলজি লিমিটেড এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড মেঘনা ক্লাউড নামে একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার স্থাপনের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যাকে 'মেড ইন বাংলাদেশ ক্লাউড' হিসেবেও উল্লেখ করা হচ্ছে।
২০১৬ সালে আমাজন ওয়েব সার্ভিসেস (এডব্লিউএস) তাদের স্থানীয় এজেন্টদের মাধ্যমে বাংলাদেশে ক্লাউড কম্পিউটিং চালু করে। পরবর্তীকালে, ইন্টারক্লাউড লিমিটেডের ব্রিলিয়ান্ট ক্লাউড প্রথম স্থানীয় সার্ভিস প্রদানকারী হয়ে ব্যবসায় যোগ দেয়।
সার্ভার ফেইলারের পর ওয়েবসাইট এবং কম্পিউটার থেকে অনলাইন ডেটা বা ফাইল হারানো একটি সাধারণ ব্যাপার।
একটি কর্পোরেট সংস্থার প্রধান আইটি অফিসার মো: এ আব্বাস চৌধুরীর মতে, সংস্থাগুলো ছোট আকারের ডেটা স্টোরেজ পরিচালনা করে তাদের ডেটা সংরক্ষণ করে। তার বিপরীতে যদি তারা একটি ক্লাউড স্টোরেজ সিস্টেমে ডেটা সংরক্ষণ করেন, তাহলে ডেটা লস রোধ করা সম্ভব কারণ ক্লাউড স্টোরেজের ক্ষেত্রে হোস্টিং সংস্থা একটি মিররিং সিস্টেমের মাধ্যমে একাধিক সার্ভারে ডেটা সংরক্ষণ করে।
তিনি যোগ করেন, ক্লাউড স্টোরেজ সরঞ্জাম কেনার প্রয়োজনীয়তা দূর করার পাশাপাশি অতিরিক্ত জায়গার সংকুলানের প্রয়োজনও দূর করে। সর্বোপরি, ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের ফলে পরিচালনা ব্যয় কমে যায়। যে কারণে কোম্পানি এবং এন্টারপ্রাইজগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে ক্লাউড সার্ভিসের দিকে ঝুঁকছে, যা ব্যবহারকারীদের হার্ডওয়্যারের পেছনে কোনো অতিরিক্ত বিনিয়োগ না করার সুবিধা দেয়। ব্যবসার বৃদ্ধির সময়েও অতিরিক্ত মূলধন ব্যয় না করার সুবিধাও দেয় এটি।
প্রতিযোগিতামূলক বাজার
বাংলাদেশের ক্লাউড স্টোরেজের বাজার বর্তমানে তিন ধরনের বিক্রেতাদের মধ্যে বিভক্ত।
হুয়াওয়ে, গুগল ক্লাউড, আমাজন, মাইক্রোসফট আজুর এবং ওরাকলের মতো আন্তর্জাতিক প্রথম সারির বিক্রেতারা বাজারের ৫৩ শতাংশ দখল করে আছে। অন্যদিকে, ক্লাউডফ্লেয়ার, লিকুইড ওয়েব, ডিজিটাল ওশান এবং ওয়াসাবির মতো স্বল্পমূল্যের আন্তর্জাতিক বিক্রেতারা বাজারের ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে।
বাজারের অবশিষ্ট অংশ স্থানীয় বিক্রেতাদের মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছে ইন্টারক্লাউড, আমরা, মির ক্লাউড, ব্র্যাকনেট, প্যাসইক্লাউড, স্কয়ার ইনফরমেটিএক্স, প্লেক্সাস এবং আইহোস্টের মতো প্রতিষ্ঠান।
আন্তর্জাতিক প্রথম সারির বিক্রেতাদের মধ্যে হুয়াওয়ে ক্লাউড দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে বাংলাদেশের বাজারে। হুয়াওয়ের ক্লাউড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট (বাংলাদেশ) এর সেলস ম্যানেজার মোঃ শাজাহান আহমেদ বলেন, চীনা টেক জায়ান্ট তার ক্লাউড সেবা এবং সমাধানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তাদের উপস্থিতির মাধ্যমে এই অঞ্চলে ডিজিটাল রূপান্তর ত্বরান্বিত করতে চাইছে। হুয়াওয়ে ক্লাউড বর্তমানে রবি, ইফাদ অটোস লিমিটেড, বিডিজবসডটকম এবং রকমারিডটকমসহ বাংলাদেশের বেশ কিছু বিশিষ্ট গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছে।
গ্লোবাল টেক জায়ান্টদের সাথে টেক্কা দিতে স্থানীয় ক্লাউড প্রদানকারীরা চলমান সংকটের মধ্যেও তুলনামূলক সস্তা প্যাকেজ, সীমাহীন ডেটা স্থানান্তর, দেশের অভ্যন্তরে ডেটা স্টোরেজ এবং ডলারের পরিবর্তে টাকায় পেমেন্ট করার সুবিধা দেয়।
ইন্টারক্লাউড লিমিটেডের পরিচালক এবং প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মোঃ হাসিবুর রশিদ জানান, তাদের সুবিধার কম ল্যাটেন্সি অ্যাক্সেস রয়েছে এবং সারাদেশজুড়েই এই সুবিধা পাওয়া যায়। এছাড়াও ঢাকা ও যশোরে কোম্পানির ব্যাকআপ অবকাঠামো রয়েছে এবং গ্রাহকরা কোনো ক্যাপিং ছাড়াই সীমাহীন ডেটা ট্রান্সফার করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
নীতি নির্ধারণে সমর্থনই তাদের একমাত্র প্রয়োজন
ক্লাউড বাজার বাড়ার সাথে সাথে আন্তর্জাতিক বিক্রেতাদের শেয়ারও বাড়ছে, যা স্থানীয় উদ্যোক্তাদের মতে ডলারের সংকটের মধ্যে সরকারের জন্য নেতিবাচক ফলাফল বয়ে আনছে।
তারা উল্লেখ করেছেন, যখন গ্রাহকরা আন্তর্জাতিক বিক্রেতাদের কাছ থেকে ক্লাউড সার্ভিসগুলো নিয়ে থাকেন, তখন বিদেশি মুদ্রায় অর্থ প্রদান করতে হয়, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি জটিল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা মনে করেন, সরকার দেশের সীমানার মধ্যে ডেটা রাখার নীতিমালা তৈরি করলে স্থানীয় বিক্রেতাদের জন্য বড় সুবিধা তৈরি হবে।
বর্তমানে ডেটা স্টোরেজ কেন্দ্রগুলোর অবস্থান সম্পর্কিত ব্যবসার জন্য কোনও সরাসরি নির্দেশিকা নেই। মীর ক্লাউডের হেড অফ বিজনেস তৌফিক এহসান বলেন, "যদি ব্যাংক এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলোকে তাদের ডেটা ক্লাউডে সংরক্ষণ করার জন্য নির্দেশিকা জারি করা হয় তবে স্থানীয় ক্লাউড শিল্পে সেটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।"