সাংবাদিক নির্যাতন: হাইকোর্ট থেকে জামিনে বের হয়ে 'হুমকি' দিয়ে আসামিদের বক্তব্য
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় অবৈধ ইটভাটার সংবাদ সংগ্রহ করার সময় সাংবাদিককে অপহৃত ও মারধরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে এলাকায় ফিরেই 'আস্ফালন' দেখিয়েছেন ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী। এছাড়াও ফুলের মালা গলায় দিয়ে শোডাউন এবং সাংবাদিক-পুলিশকে হুমকি দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন মামলার আসামিরা।
ভিকটিম সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, "আমাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে, সাংবাদিক কয়ে (সাংবাদিক বলে) ইসলামপুরবাসীর মনঃক্ষুণ্ণ করেছেন। ইসলামপুরের মানকে অসম্মানিত করার জন্য যারা পাঁয়তারা করেছেন, তাদের কাছে অনুরোধ আপনারা সাবধান হয়ে যান। আমার পেছনে যারা এমন কুচক্রী করেছেন তাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেব।"
বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যলয়ের সামনে দাঁড়িয়ে তার সমর্থকদের উদ্দেশ্য করে এসব কথা বলেন তিনি।
সাংবাদিক অপহরণ, মারধর, চাঁদাবাজির মামলার প্রধান দুই আসামি মহিউদ্দিন তালুকদার মোহন ও চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী গত মঙ্গলবার হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের আগাম জামিন লাভ করেন। জামিনের একদিন পর বৃহস্পতিবার ইসলামপুরে ফিরেই চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী এসব কথা বলেন। এসময় তার পাশে ছিলেন মামলার প্রধান আসামি মহিউদ্দিন তালুকদার মোহন।
শোডাউনের বক্তব্যে রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) প্রতি হুমকি দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, "মামলা দায়ের করার পর গত ২৮ ডিসেম্বরও আমি অফিস করেছি। ফাইলে সাইন করেছি। আমাকে ওসি ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছে, আপনি কী অফিস করেছেন? আমি ওসিকে বলেছি, আমি কী চোর-ডাকাত নাকি খুনি যে আসবো না। আমি জনগণের লোক। আমি চোর-ডাকাত, খুনি হলে আমি থানায় হাজির হবো। আমাকে খুঁজতে হবে না। আমাকে খুঁজলে ইসলামপুরের মানুষ আপনাকে (ওসি) জবাব দেবে।"
এ বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহবুব মিলকী টিবিএসকে বলেন, "শোডাউনের খবর আমি জানি না। আমি খোঁজ নিচ্ছি। মামলার পর থেকে তারা (আসামিরা) পলাতক ছিল। আমি তাকে ফোন দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। সে অফিস করছে জানার পর আমি অফিসার পাঠিয়েছিলাম। তাদের পাওয়া যায়নি।"
এর আগে গত ২৫ ডিসেম্বর সকালে রাঙ্গুনিয়ায় অবৈধ ইট ভাটার ছবি তোলায় স্থানীয় ইউপি সদস্য মহিউদ্দীন তালুকদার মোহনসহ ৫-৬ জন পিস্তল ঠেকিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার প্রতিনিধি আবু আজাদকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে তার কার্যালয়ে নিয়ে যায়। সেখানে বেঁধে রেখে তাকে নির্যাতন করে। পরে ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরীর নির্দেশে তার মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলে এবং মানিব্যাগ ও আইডি কার্ড- সব কেড়ে নিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয়।
গত ২৬ ডিসেম্বর বিকালে রাঙ্গুনিয়া মডেল থানায় হত্যাচেষ্টা, অপহরণ, টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেওয়া, মারধর এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে বাদি হয়ে মামলা করেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক আবু আজাদ। মামলায় ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মহিউদ্দিন তালুকদার মোহন (৪০), চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী (৫৫), ইটভাটার ম্যানেজার কামরান (৩০), মোহনের সহযোগী কাঞ্চন তুড়ির (৩০) নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাত আরো ৫-৭ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে অভিযুক্ত করা হয়। ওইদিন রাতেই আসামি কাঞ্চন তুড়িকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একদিনের রিমান্ড শেষে আসামি কাঞ্চন তুড়ি বর্তমানে কারাগারে আছেন।
ইসলামপুরে শোডাউনের বক্তব্যে ইউপি সদস্য মহীউদ্দিন তালুকদার মোহন বলেন, "আমি যদি মাদক সেবন করি, আমাদের যদি মাদকসহ ধরতে পারেন, আমাকে পুলিশে সোপর্দ করবেন। তবে একটি কথা বলে যাচ্ছি, ইসলামপুরে কে মাদক বিক্রি করে, কে মাদক খায়, আমার সব জানা আছে। হ্যাঁ, আমি আগে মাদক সেবন করতাম। রিহ্যাবে (মাদক নিরাময় কেন্দ্র) ছিলাম। এরপর থেকে আমি মাদক সেবন করি না। এখন মাদকের গডফাদারদের বিরুদ্ধে আমরা আছি, থাকবো।"
এদিকে সাংবাদিক আবু আজাদের অপহরণ ও হামলার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে দ্রুত তদন্ত করে এবং দোষীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে বিশ্বব্যাপী সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। এর আগে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তাদের এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনে আগামী ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়।