বিআইএফসি’র সাবেক চেয়ারম্যান একাই আত্মসাৎ করেছেন ৫১৭ কোটি টাকা: প্রতিবেদন
আলোচিত নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসি) থেকে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আবদুল মান্নান একাই ৫১৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা নামে-বেনামে ঋণের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন বলে উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।
বর্তমানে মোট সম্পদের চেয়ে দায় বেশি হওয়ায় বিআইএফসির পাওনাদার বা আমানতকারীদের পাওনা ফেরত পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির দাখিল করা প্রতিবেদনে উঠে আসে এ তথ্য।
সম্প্রতি হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাওনাদার ও আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের জোরালো ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়াও এসব আর্থ আত্মসাতের দায়ে মেজর মান্নানসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে পৃথক ৩০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রায় ১,১০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বিআইএফসির মতো অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে লুটপাট বন্ধ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ৯ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।
বিআইএফসিতে সৃষ্ট অবস্থা সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৬ সালে প্রতিটি ১০০ টাকা মূল্যের ৫০ হাজার সাধারণ শেয়ারে ৫০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধন হিসেবে বিনিয়োগ করে বিআইএফসি গঠন করা হয়। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে এটি। বিআইএফসি ২০০৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।
বর্তমান বিআইএফসি থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, প্রতিষ্ঠানটির মোট সম্পদ ৮২৭.২৯ কোটি টাকার বিপরীতে মোট দায় ১ হাজার ৮৩৫.৯৬ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির সম্পদের চেয়ে দায়ের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মেজর (অব.) মান্নান এককভাবে তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে-বেনামে ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৬৭টি ঋণ হিসাবের বিপরীতে ৫১৭.৬৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটির কাছে দেওয়া বক্তব্যে এসব টাকার দায়ও স্বীকার করেছেন তিনি।
নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম তদন্তে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এ কে এম সাজেদুর রহমান খানকে চেয়ারম্যান করে ৫ সদস্যের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ঘুষের বিনিময়ে অনিয়মে সহায়তা করেছেন বলে আদালতে অন্তত দুই অভিযুক্তের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির পর এ কমিটি গঠিত হয়।
তদন্ত চলাকালীন স্বীকারোক্তিমূলক বিবৃতিতে উঠে আসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমের নাম। ফলে তাকে এনবিএফআই পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব প্রত্যাহার করা হয়।