তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে গোলাগুলি চলছেই
মিয়ানমার সীমান্তে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে; ভারী গুলি ও বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তে জিরো লাইনের পাশের এলাকাগুলো।
বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুর থেকে শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানের পর সন্ধ্যা ৬টা থেকে আবারও গোলাগুলির বিকট শব্দ শুনতে পায় স্থানীয়রা, এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামগুলোতে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ আলম টিবিএসকে বলেন, "বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং আশপাশের এলাকায় মিয়ানমারের সশস্ত্র দুইগ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি বন্ধ ছিল। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে আবারও গোলাগুলি শুরু হয়েছে।"
ঘটনার পর থেকে কোনারপাড়া জিরো লাইন রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং আশপাশের এলাকায় মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠি আরএসও'র সদস্যদের প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে দেখা গেছে বলে জানান স্থানীয় এ ইউপি সদস্য।
তবে সীমান্ত পরিস্থিতি শুক্রবার দিনভর শান্ত থাকার কথা বললেও নতুন করে গোলাগুলির খবর সম্পর্কে তিনি অবহিত নন বলে জানিয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ির ইউএনও রোমেন শর্মা।
যোগাযোগ করা হলে, ৮ এপিবিএন-এর এএসপি মো. ফারুক আহমেদ বলেন, "মিয়ানমারে সংঘাতের খবরের পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।"
"এখানকার (বাংলাদেশ সীমান্ত) পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।"
গত সপ্তাহের শুরুর দিকে, তুমব্রু সীমান্তের জিরো লাইনের পাশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কাছে মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলিতে একজন নিহত এবং একজন আহত হয়।
নিহতের নাম হামিদ উল্লাহ (২৭) এবং আহতের নাম মুহিব উল্লাহ (২৫)।
ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, "১৮ জানুয়ারি সকাল ৬টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ির কোনারপাড়া জিরো লাইনের কাছে এআরএসএ ও আরএসও সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।"
১৭ জানুয়ারি কক্সবাজারের উখিয়ার ধামাখালী সীমান্তে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
সীমান্তের কাছে বসবাসকারী একাধিক ব্যক্তি জানান, বিজিবি সদস্যরা মাদক বা অন্যান্য চোরাই মালামালসহ কয়েকজনকে আটক করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে এআরএসএ শীর্ষ নেতার স্ত্রীও রয়েছে।
এ ঘটনার পর মিয়ানমার থেকে শতাধিক সন্ত্রাসী সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করে এবং এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিজিবির সীমান্ত ফাঁড়িতে (বিওপি) হামলা চালায়। তারা আটককৃতদের নিয়ে মিয়ানমারে চলে যায় বলেও জানিয়েছে স্থানীয়রা।
একইদিনে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিজিবি-৩৪ ব্যাটালিয়নের ক্যাপ্টেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আটক করতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বালুখালী বিওপি থেকে আনুমানিক ১.৫ কিলোমিটার দক্ষিণে একটি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বালুখালী বিওপির একটি বিশেষ টহল দল।
এসময় বিজিবি টহলের উপস্থিতি টের পেয়ে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিজিবি সদস্যরা তাদের জানমাল রক্ষার জন্য কৌশলগত অবস্থান থেকে পাল্টা গুলি চালালে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে মিয়ানমারের দিকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
এ ঘটনায় বিজিবির কোনো সদস্য আহত হননি। তবে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কোনো সদস্য আহত হয়েছেন কিনা তা জানা যায়নি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ঘটনার পর থেকে বিওপিতে সকল বিজিবি সদস্যরা উচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং টহল ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।