ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ উপনির্বাচন: আবদুস সাত্তারকে জেতাতে আ.লীগের নানান মেকানিজম
সাবেক বিএনপি নেতা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার জয়ের পথকে সুগম করতে আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই নানান মেকানিজম করছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বিএনপির। সত্তারের পক্ষে কাজ করতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা মাঠে নেমেছেন বলে দাবি তাদের।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। তারা বলছে, ব্যক্তিগত সম্পর্কের খাতিরে আবদুস সাত্তারের প্রচারণায় আওয়ামী লীগের কয়েকজন সদস্য যোগ দিয়েছেন।
সূত্র বলছে, স্বাধীনতার পর থেকে ওই সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ কখনোই নির্বাচিত হয়নি। সেখানে আওয়ামী লীগের একটি অবস্থান তৈরি করতে এবং নেতাদের নির্বাচনে ইচ্ছা থাকলেও বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই সরকার পাঁচবারের সংসদ সদস্য, ৮৪ বছর বয়সী আব্দুস সাত্তারকে সহায়তা দিচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, আগামী ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মাঠ থেকে এখন পর্যন্ত চারজন প্রার্থীকে সরানো হয়েছে।
যাচাইবাছাইয়ের পর, বৈধ ঘোষিত আট প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী— জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মঈন উদ্দিন এবং আওয়ামীপন্থী স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের শাহজাহান আলম- দলীয় সিদ্ধান্তে নিজেদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন।
এরপরে গত ১৮ জানুয়ারি সরে দাঁড়ান জাতীয় পার্টির দুবারের সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা। দলীয় প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের সঙ্গে পরামর্শক্রমেই নির্বাচন থেকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়িয়েছেন বলে তিনি জানান।
সূত্র বলছে, জিয়াউল মৃধাকে আগেরদিন ঢাকায় ডেকে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ফিরেই তিনি এই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত জানান।
এ ব্যপারে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হাফিজুর রহমান মোল্লা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "রাতের আঁধারে প্রলোভন ও ভয় দেখিয়ে জিয়াউল হক মৃধাসহ অন্য প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে সরকার।"
এর আগে, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে আব্দুস সাত্তারসহ বিএনপির সকল সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেন। পরে ক্ষোভে দল থেকে পদত্যাগ করেন আব্দুস সাত্তার। উপনির্বাচনের তফসিল দিলে, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে তিনি মনোনয়নপত্র কেনেন। তাই দল তাকে বহিষ্কার করে।
এখন আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াসহ মাঠে থাকা প্রার্থীরা হলেন- আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু আসিফ আহমেদ, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আবদুল হামিদ ভাসানী এবং জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম।
আগামী ১লা ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ।
সাত্তারের পক্ষে মাঠে আওয়ামী লীগ
বৃহস্পতিবার সরাইলের পরমানন্দপুর গ্রামে আব্দুস সাত্তারের মতবিনিময় সভায় সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। তবে নেতাদের দাবি, ব্যক্তিগত সম্পর্কের খাতিরে কেউ কেউ সভায় যোগ দিয়েছেন।
আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক আবু নাসের আহমেদ টিবিএসকে বলেন, "আওয়ামী লীগ সাত্তার সাহেবের পক্ষে কাজ করছে এটি সঠিক নয়। তার সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকায় কেউ কেউ তার মিটিং-এ যোগ দিয়েছেন। তাছাড়া তিনি তো এখন আর বিএনপির কেউ নন।"
আব্দুস সাত্তারের ছেলে মাইনুল হাসান তুষার টিবিএস-কে বলেন, "আগে বাবার নির্বাচনে শুধু বিএনপির লোকজন মাঠে থাকত। এখন সে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছে। ফলে দলমত নির্বিশেষে সবাই আমার বাবার পক্ষে আছেন। আমরা এটিকে স্বাগত জানিয়েছি।"
রুমিন ফারহানাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
এদিকে শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ।
আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছফিউল্লাহ মিয়া বলেন, রুমিন ফারহানা তার কিছু কর্মীকে বলেছে নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।