ব্র্যাক ব্যাংকের ৫১ কোটি টাকা আদায়ে ১২৩ কোটির সম্পত্তি নিলামে বিক্রি: ৬ মাসের মধ্যে ফেরতের নির্দেশ
সুদ-আসলসহ পাওনা ৫১ কোটি টাকার বিপরীতে কুষ্টিয়ার ব্যাসায়ী শফিকুল ইসলামের ১২৩ কোটি টাকার সম্পত্তি নিলামে তুলে বিক্রি করেছিল ব্র্যাক ব্যাংক। সেই সম্পত্তি আগামী ছয় মাসের মধ্যে ওই ব্যবসায়ীর কাছে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের আপিল বিভাগ।
শফিকুলের কাছ থেকে ৫১ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায়ে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও ব্র্যাক ব্যাংক সম্পত্তি বিক্রি করে।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) আপিলের শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ শফিকুলকে ছয় মাসের মধ্যে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের নির্দেশ দেন। ঋণ পরিশোধের দুই সপ্তাহ পর তিনি তার সম্পত্তি ফিরে পাবেন।
এছাড়া, নিলামে সম্পত্তি কেনা ব্যবসায়ী আবদুর রশিদকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে শফিকুলকে ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শফিকুল ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে নিলামে স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টে করা তার আবেদন খারিজ হয়ে যাবে। নিলামে জড়িত পক্ষের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলাও খারিজ হয়ে যাবে বলে আপিল বিভাগের বেঞ্চ জানিয়েছেন।
শফিকুলের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী বলেন, "ব্যবসায়ী শফিকুলের কাছে আসল ও সুদসহ ব্র্যাক ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ ৫১ কোটি টাকা। তিনি ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন। বাকি টাকা ছয় মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এরপর তিনি তার সম্পত্তি ফিরে পাবেন।"
ব্র্যাক ব্যাংকের সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম এফ হুসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আপিল বিভাগের রায় আমাদের পক্ষে। আদালত এভাবে আরও পদক্ষেপ নিলে আমাদের দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে আসবে। আমরা আদালতের আদেশ ইতিবাচকভাবেই নিয়েছি।"
সূত্র জানায়, শফিকুল ইসলাম ২০১৬ সালে কুষ্টিয়ার ব্র্যাক ব্যাংকের পোড়াদহ শাখা থেকে কিছু সম্পত্তি বন্ধক রেখে ৪২ কোটি টাকা ঋণ নেন।
কোভিড-১৯ সময়কালে এই ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হন তিনি; এরপর মেসার্স বিশ্বাস ট্রেডার্স, ভিআইপি রাইস মিলস এবং ভিআইপি ফ্লাওয়ার মিলসসহ তার বন্ধকী সব সম্পত্তি বিক্রির জন্য নিলামের ব্যবস্থা করে ব্যাংক।
এদিকে, ২০২২ সালের ২ আগস্ট আদালত শফিকুলের দায়ের করা রিট আবেদনের ভিত্তিতে তিন মাসের জন্য নিলামের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেছিল।
আদালত তাকে এক মাসের মধ্যে ব্যাংকে ২০ কোটি টাকা এবং এক বছরের মধ্যে আরও ৬ কোটি টাকা দিতে বলেছিল।
আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও ব্র্যাক ব্যাংক শফিকুলের ১২৩ কোটি টাকার সম্পত্তি আবদুর রশিদের কাছে বিক্রি করে মাত্র ১৫ কোটি টাকায়।
পরে নিলামে জড়িত পক্ষের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেন শফিকুল ইসলাম।
স্থগিতাদেশ লঙ্ঘন করে নিলামে সম্পত্তি বিক্রির করায় গেল বছর ১১ আগস্ট ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম এফ হোসেন, কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মোঃ খায়রুল আলম, ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ এবং অন্য একজনকে এই বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য তলব করেন হাইকোর্ট।
এদিকে, নিলামে সম্পত্তি কেনা ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন। বুধবার এই আপিলের শুনানি হয়।