পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সংঘর্ষ: ৬ মামলায় ৮,২০০ আসামি
শুক্রবার (৩ মার্চ) পঞ্চগড়ে আহমদিয়া (কাদিয়ানি) সম্প্রদায়ের বার্ষিক জলসাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে দুজন নিহত ও অন্তত ৩০ জন আহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা ছয়টি মামলায় আট হাজারের বেশি লোককে আসামি করা হয়েছে।
পঞ্চগড় সদর থানায় গুজব ছড়ানো, হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও সরকারি কাজে বাধাদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে পুলিশের পক্ষ থেকে চারটি, র্যাবের পক্ষ থেকে একটি এবং আহমদিয়া মুসলিম জামাতের পক্ষে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় ৩১ জনের নামে এবং অজ্ঞাতনামা ৮,২০০ জনকে আসামি করা হয়। ছয় মামলায় এখন পর্যন্ত ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের সবাইকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে পঞ্চগড় পৌরসভার যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাজনগর এলাকার সোলায়মান আলীর ছেলে ফজলে রাব্বী (২৮) ও তেঁতুলিয়া উপজেলার সাতমেরা এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে রাব্বী ইমনকে (২৬) গ্রেপ্তার করা হয়।
আহমদিয়া মুসলিম জামাতের ইঞ্জিনিয়ার জাহিদ হাসানকে হত্যার ঘটনায় পঞ্চগড় পৌরসভার রাজনগড় এলাকার ইসমাইল হোসেন ঝনু (২৫) ও পৌরসভার তুলার ডাঙ্গা এলাকার রাসেল হোসেনকে (২৮) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এবং হামলা, ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধাদানসহ আরও কয়েকটি অভিযোগে পুলিশ ও র্যাবের দায়ের করা মামলায় আরও ৭৭জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ মার্চ রাতে পঞ্চগড় সদর থানায় পুলিশের পক্ষে এসআই মাসুদ রানা, এসআই সাইদুর রহমান, এসআই সামসুজ্জোহা সরকার, এসআই আলতাফ হোসেন এবং র্যাব-১৩-এর পক্ষে ডিএডি আব্দুস সামাদ বাদি হয়ে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, সরকারি কাজে বাধাদানসহ কয়েকটি অভিযোগে এসব মামলা দায়ের করেন।
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
"বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ বিজিবি ও র্যাব মোতায়েনসহ টহল দেওয়া হচ্ছে। আমরা তদন্ত করে জড়িতদের গ্রেপ্তার করছি," বলেন তিনি।
ইঞ্জিনিয়ার জাহিদ হাসান হত্যার ঘটনায় আহমদিয়া মুসলিম জামাতের পক্ষে তার বাবা ওসমান আলী বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবে অজ্ঞাতনামা ৪০০ জনকে আসামী করা হয়েছে।
ইঞ্জিনিয়ার জাহিদ হাসানকে হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হত্যার ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত ৩ মার্চ, পঞ্চগড় শহরে কাদিয়ানি সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে মুসল্লি ও পুলিশের একাংশের সংঘর্ষে দুইজন নিহত ও অন্তত ৩০ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পাথর ছুঁড়তে থাকা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও একশোরও বেশি রাবার বুলেট ছোঁড়ে পুলিশ।
সহিংসতার ঘটনায় বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হয়েছেন।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শান্তি সমাবেশ
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় দুইজন নিহত হওয়ায় পঞ্চগড়ে শান্তি সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পঞ্চগড় জেলা শাখা।
রোববার (৫ মার্চ) জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে ওই শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রেলপথমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, "পঞ্চগড়ে হামলা ও সহিংসতার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় আমরাও মাঠে রয়েছি।"
"পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে তৌহিদি জনতার নামে পবিত্র ধর্ম ইসলামকে ব্যবহার করে গুজব ছড়িয়ে এই সহিংসতা ঘটানো হয়েছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি জামায়াত যে ষড়যন্ত্র করছে, এটি ছিল তথাকথিক ধর্মের আড়ালে তাদের তৎপরতারই একটি অংশ," যোগ করেন মন্ত্রী।