‘হেফাজতে’ মৃত্যু: নির্যাতন নয়, খারাপ স্বাস্থ্যের কারণে হয়েছে, দাবি র্যাবের
আগে থেকেই স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছিল নওগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের, তিনি নির্যাতনে মারা যাননি বলে সোমবার (২৭ মার্চ) জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাটি জেসমিনের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে অর্থ লেনদেনের অভিযোগও করেছে।
র্যাবের হাতে আটক হওয়ার পর গত ২৪ মার্চ জেসমিনের মৃত্যু হয়। তাকে কোনোরকম নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে.কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার বলেন, তাকে কেউ নির্যাতন করেনি। আটক হওয়ার পরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
শাহরিয়ার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের করা একটি মামলায় জেসমিনকে আটক করা হয়।
'তাকে বেলা ১১.৩০টার দিকে আটক করা হয়। নওগাঁয় কোনো ক্যাম্প না থাকায় তাকে জয়পুরহাট র্যাব কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। আটক হওয়া থেকে অসুস্থ হওয়া পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা সময় তিনি র্যাবের গাড়িতেই ছিলেন, সেখানে তাকে নির্যাতনের কোনো প্রশ্নই আসে না' তিনি বলেন।
'গুরুতর অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা তাকে আটক করি, আমাদের কাছে ইনফরমেশন ছিল তার অ্যাকাউন্টে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ রয়েছে। তাকে গাড়িতেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিলো। এসময় জেরার অংশ হিসেবে, তার ফোন চাওয়া হলে তিনি দিতে অস্বীকৃতি জানান'।
'প্রথমে তিনি ফোন দিতে অস্বীকার করলেও শেষপর্যন্ত দেন। তার ফোনে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের বেশকিছু স্ক্রিনশট পাই আমরা। এসব লেনদেনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি ভয়ে ঘামতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে গাড়িতেই বমি করেন। তখন দ্রুত তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়' বলে জানান শাহরিয়ার।
চিকিৎসকরা প্রাথমিকভাবে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের সন্দেহ করেছিলেন; তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করার সময়, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা প্রত্যক্ষদর্শীরা তার শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন বা বাহ্যিক ক্ষত খুঁজে পাননি, যোগ করেন তিনি।
র্যাব-৫ এর অধিনায়ক বলেন, "তিনি একজন নারী, তার ওপর একজন সরকারি কর্মচারী, তাই আমরা সতর্কই ছিলাম। কেন আমরা তাকে নির্যাতন করব? গাড়ির ভেতরে কীভাবে নির্যাতন করা সম্ভব?"
এসময় মৃতের স্বজনদের উদ্ধৃত করে তিনি আরো দাবি করেন, জেসমিনের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা ছিল।
এর আগে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল, তিনি হৃদরোগে ভুগছিলেন। জেসমিনের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।
তবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহমেদ বলেছেন, তার মাথায় ছোট একটি লাল দাগ ছিল। ওই সময় সিটি স্ক্যান করলে তার মস্তিকে প্রচুর রক্তক্ষরণ দেখা যায়। মস্তিস্কে মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।