প্রথম আলোর সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর সাভার প্রতিনিধি শামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এরপর ভোর ৪টার দিকে শামসুজ্জামানকে তার সাভারের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, প্রথম আলোর সাংবাদিককে সিআইডি তুলে নিয়েছে।
তিনি বলেন, 'একটি মামলা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
মন্ত্রী বলেন, এটি যেহেতু সাইবার অপরাধ-সংক্রান্ত বিষয়, সিআইডি যার দায়িত্বে আছে, সেজন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাটি তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুলে নিয়েছিল।
রাত সোয়া ২টার দিকে তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেন ঢাকা উত্তর মহানগর যুবলীগের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া।
মামলার বিবরণীতে বলা হয়, শামস তার প্রতিবেদনের জন্য একটি শিশুকে ১০ টাকা দেন এবং তার বানোয়াট উদ্ধৃতি দেন।
বিবরণীতে আরও বলা হয়, এটি প্রমাণ করে যে ২৬ মার্চ প্রকাশিত প্রতিবেদনটি বিশ্বব্যাপী সরকার ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য একটি মহলের প্ররোচনায় করা হয়েছে।
কিবরিয়া তার বিবরণীতে বলেন, স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে তার অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে।
ভোরের দিকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়
বুধবার ভোর ৪টার দিকে সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন আমবাগান এলাকা থেকে সিআইডি পরিচয় দিয়ে সাদা পোশাকের লোকজন শামসুজ্জামানকে তুলে নিয়ে যায়।
আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাজু মণ্ডল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ঢাকা থেকে সিআইডির কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আসেন এবং শামসুজ্জামানকে তার বাসা থেকে ভোর ৪টার দিকে তুলে নিয়ে যান। আমি কর্মকর্তাদের নাম জানি না।'
তবে এ বিষয়ে সিআইডির পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার ভোর ৪টার দিকে তিনটি গাড়িতে করে প্রায় ১৬ জন শামসুজ্জামানের বাসার সামনে যান।
তুলে নেওয়ার পর শামসুজ্জামানকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন এবং একজন নিরাপত্তা প্রহরীকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একটি খাবারের দোকানে যান তারা। সেখানে সাহরি খান।
ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তারা শামসুজ্জামানের বাসায় ফিরে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তিনটি গাড়ির মধ্যে একটিতে নম্বর প্লেট ছিল না।
শামসুজ্জামান যে বাড়িতে থাকতেন সিআইডি পরিচয় দেওয়া লোকজন ডেকে আনেন সেই বাড়ির মালিককে। তারা বাড়ির মালিককে বলেন, শামসুজ্জামানের করা একটি প্রতিবেদনের বিষয়ে আপত্তি আছে, তাই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হচ্ছে।
আশুলিয়া থানার এসআই জানান, পরে কর্মকর্তারা জব্দ করা মালামালের তালিকা তৈরি করে সেখানে তার স্বাক্ষর নেন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে কথা বলার সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন বলেন, 'আমি যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা, তাই কর্মকর্তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা বলেছিলেন, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নারী সহকর্মী বিপদে পড়েছেন, তাই তারা এখানে এসেছেন। এ ব্যাপারে তারা আমাকে শামসুজ্জামানের বাসায় নিয়ে যান। পরে শামসুজ্জামানকে আটক করেন।
*সংশোধনী: এই প্রতিবেদনটি এর আগে 'জিজ্ঞাসাবাদ শেষে প্রথম আলোর সাংবাদিককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী' শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল।