পোস্টারে আবৃত পিলারগুলোকে রাঙিয়ে তুলছে ঢাকা উত্তর সিটি
রাজধানীর ফ্লাইওভার, মেট্রোরেলের পিলারগুলোকে দৃষ্টিদূষণ থেকে রোধ করতে পিলারে পিলারে দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিতি আর্ট কার্যক্রম শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। একে একে উত্তর সিটির আওতার সকল পিলারে বিভিন্ন সচেতনতামূলক এবং দৃষ্টিনন্দর আর্টওয়ার্ক করবে ঢাকা উত্তর সিটি।
ইতিমধ্যে মগবাজার ফ্লাইওভারের পিলারগুলোতে এ আর্টওয়ার্কের কাজ শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকটি পিলারে বিভিন্ন সচেতনতামূলক বাক্যসহ নানা আর্টে পিলারগুলো রাঙিয়ে তুলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল চিত্রশিল্পী।
সোমবার মগবাজার চৌরাস্তা ফ্লাইওভারের পিলারে দৃষ্টিনন্দন এ গ্রাফিতি আর্টওয়ার্কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন বলছে, এখানে সুফল পেলে ঢাকা উত্তরের আওতার সবগুলো মেট্রোরেল, ফ্লাইওভারের পিলারসহ সকল পিলারে এ আর্ট করা হবে।
শুধু আইন প্রয়োগ করে শাস্তি দিয়ে নগরের সৌন্দর্য রক্ষা সম্ভব নয়। নগরীর খালি জায়গায় সৃষ্টিশীল কিছু করে মানুষকে সৌন্দর্য রক্ষা করতে উৎসাহ দিতে তারা এমন কাজ করবে বলে জানিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি।
সোমবার মগবাজার চৌরাস্তা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মগবাজার চৌরাস্তা মোড় থেকে সাতরাস্তার দিকের ফ্লাইওভারের পিলারগুলো পরিষ্কার করে সাদা রং করে তার উপর বিভিন্ন আর্ট অঙ্কন করছেন একদল চিত্রশিল্পী। রাস্তায় যানবাহনের চাপ থাকায় রাতেই বড় অংশের কাজ করেন তারা। ইতিমধ্যে ১০/১২ টি পিলারে তাদের আর্ট সম্পন্ন হয়েছে।
মগবাজার এলাকার একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের চাকুরিজীবি নূর মোহাম্মদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ঢাকার অন্যসব দূষণের মধ্যে দৃশ্যদূষণ অন্যতম। ঢাকার রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গেলে পিলারে, দেয়ালের পোস্টার, ব্যানারই চোখে পড়ে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এ উদ্যোগ সত্যিই প্রশংনীয়।'
তিনি আরও বলেন, 'ঢাকা শহরে এমনিতেই সৌন্দর্য বলতে কিছু নেই। এখন যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যা দৃষ্টিদূষণ অনেকটাই কমাবে। বিশেষ করে দেশের বাইরে থেকে যেসব বিশিষ্টজনেরা দেশে আসেন তাদের কাছেও ছোট হতে হবে না। পুরো ঢাকাতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হোক।'
ইয়াকুব আলী নামের একজন টিবিএসকে বলেন, 'শহরের উন্নয়নে অনেক কিছুই দেখি কাজ শুরু হয়, কিন্তু কিছুদিন পরেই আবার এসব উদ্যোগগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে। আশা করি উত্তর সিটির এ উদ্যোগ মুখ থুবড়ে না পড়ে নিত্যনতুন বিষয় যুক্ত হবে।'
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন টিবিএসকে বলেন, 'মগবাজারের আর্টওয়ার্ক পাইলটিং হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এতে যদি ফিডব্যাক ভালো আসে তবে একে একে ঢাকা উত্তরের মেট্রোরেলের পিলার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলারসহ সকল পিলারে এ আর্টওয়ার্ক করা হবে। এসব আর্টে বিভিন্ন সচেতনতামূলক বাক্য থাকবে। যেমন, গাড়ির হর্ণ, মশা, যানজট, জলাবদ্ধতা প্রভৃতি নিরসনে বিভিন্ন সচেতনতামূলক বাক্য লেখা হবে। এছাড়াও আর্টের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে ঢাকার বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন ও ইতিহাস।'
কিছুদিন আগে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, যারা যত্রতত্র পোস্টার, ব্যানার লাগিয়ে শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করছে তাদের বিরুদ্ধে একে একে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এছাড়া আমরা সিটি কর্পোরেশন থেকে চেষ্টা করছি মেট্রোরেলের পিলার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলারে বিভিন্ন সচেতনতামূলক আর্ট করতে। এছাড়া আমরা বিভিন্ন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের সাথেও কথা বলছি এসব অবহেলিত জায়গাগুলোর সৌন্দর্য বর্ধনের বিষয়ে।'
গত ডিসেম্বরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলে, দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো নিয়ন্ত্রণে আইন রয়েছে। দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১২ অনুসরণের জন্য তারা সবার প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছে। কেউ বিধি লঙ্ঘন করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এরপরে বিভিন্ন সময়ে অভিযানে নামে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।
নগরীর সৌন্দর্য রক্ষায় সরকার ২০১২ সালে 'দেওয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১২' প্রণয়ন করে। এ আইনের ধারা ৪ অনুযায়ী নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্য কোনো স্থানে দেওয়াল লিখন বা পোস্টার লাগানো যাবে না।