গরমে বেঁকে যাচ্ছে লাইন, ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে ট্রেন চলাচল
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত সাড়ে ৯ কিলোমিটার রেলপথে ট্রেন চলাচল ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। অতিরিক্ত গরমে এই রেলপথের কয়েকটি অংশে বেঁকে যাচ্ছে রেললাইন।
শনিবার (২৯ এপ্রিল) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার দাড়িয়াপুর ও হরণ এলাকায় রেললাইন বেঁকে যায়। ফলে বেলা ১১টা থেকে আপলাইনে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেটের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। আর এক লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় শিডিউল বিপর্যয় ঘটে বিলম্বে চলছে প্রায় সবকটি ট্রেন। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।
জানা গেছে, শনিবার বেলা ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার দাড়িয়াপুর এলাকায় রেললাইনে বেঁকে যাওয়ার ঘটনা জানতে পারে রেল কর্তৃপক্ষ। এর পর থেকেই আপলাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে সদর উপজেলার হরণ এলাকায়ও রেললাইন বেঁকে যাওয়ার বিষয়টি নজরে আসে রেলওয়ে কর্মীদের।
এর আগে গত বৃহস্পতিবারও অতিরিক্ত গরমে রেললাইন বেঁকে গিয়ে দাড়িয়াপুর এলাকায় ঢাকাগামী একটি মালবাহী কনটেইনার ট্রেনের ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়। ওই ঘটনায় প্রায় ৫০০ মিটার রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ভেঙে যায় কংক্রিটের স্লিপার। দুর্ঘটনার প্রায় ৩১ ঘণ্টা পর রেললাইনের প্রয়োজনীয় মেরামত এবং কাঠের স্লিপার বসিয়ে আপলাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।
বারবার একই জায়গায় লাইন বেঁকে যাওয়ার কারণ হিসেবে অতিরিক্ত তাপমাত্রার কথা বলছে রেল কর্তৃপক্ষ। মূলত রেললাইনের তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলেই বেঁকে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। কিন্তু শনিবার দাড়িয়াপুরের রেললাইনের তাপমাত্রা প্রায় ৫০ ডিগ্রি ছোঁয়; ফলে বেঁকে যায় রেললাইন। এ ঘটনার পর রেললাইন ঠান্ডা করতে পানি ঢেলে কচুরিপানা দেন রেলওয়ের কর্মীরা।
রেললাইনে তাপমাত্রা কমলে কাঠের স্লিপারগুলো বদলে কংক্রিটের স্লিপার বসানো হবে। এরপর পরীক্ষা শেষে চালানো হবে ট্রেন। তবে তার জন্য আরও ৩-৪ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, রেলযাত্রা নিরাপদ করতে এবং বড় ধরনের দুর্ঘটনা রোধে রেললাইনে নজরদারি বাড়ানোর দাবি সাধারণ যাত্রী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের।
জেলা নাগরিক ফোরামের সভাপতি পীযূষ কান্তি আচার্য বলেন, 'ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সম্প্রতি ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। কিন্তু তখন রেললাইন বেঁকে যায়নি। আজকে তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অবস্থায় কেন লাইন বেঁকে গেল, সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। এভাবে বারবার লাইন বেঁকে গেলে বড় ধরনের ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটবে।'
এ বিষয়ে আখাউড়া রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান আহমেদ তারেক বলেন, 'দাড়িয়াপুরে দ্বিতীয়বার লাইন বেঁকে যাওয়ার পেছনে ভিন্ন কোনো কারণ নেই। অতিরিক্ত গরমেই বেঁকে গেছে। ডাউন এবং আপ—দুই লাইনেই নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কাঠের স্লিপারগুলো বদলে কংক্রিটের স্লিপার বসানো হচ্ছে। আর যেন লাইন না বেঁকে যায়, তার জন্য সব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।'
এদিকে দুর্ঘটনা এড়াতে ডাউন লাইনে গতি কমিয়ে ট্রেন চালানোর নির্দেশনা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফলে সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার বেগে দুর্ঘটনাস্থল অতিক্রম করবে ট্রেনগুলো। এছাড়া অন্য স্থানগুলোতে গতিবেগ থাকবে সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, 'তাপমাত্রা কমলে এবং কংক্রিটের স্লিপার লাগানোর পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কাঠের স্লিপারগুলোর লোড নেয়ার সক্ষমতা কিছুটা কম, যার জন্য বাঁকা হয়ে যায়।'
উল্লেখ্য, এর আগে গত বছরের ২৯ আগস্ট সদর উপজেলার ছোটহরণ এলাকায় অতিরিক্ত গরমে রেললাইন বেঁকে ব্যাহত হয় ট্রেন চলাচল।