রাজশাহী সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হতে চান বিএনপির সাবেক নেতা সাহিদ হাসান
নির্বাচন থেকে দূরে থাকার ঘোষণা দিলেও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান বিএনপির সাবেক নেতা সাহিদ হাসান। তিনি বিএনপির প্রভাবশালী সাবেক নেতা রাজশাহীর পুঠিয়া-দুর্গাপুর আসনের দুইবারের সংসদ সদস্য নাদিম মোস্তফার ছোট ভাই। তবে তার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বিএনপির নেতারা বলেছেন, তিনি কোনো পদে নেই। তিনি বিএনপির কেউ নন।
সাহিদ হাসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমি পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। নির্বাচন কমিশন যদি সুষ্ঠু নির্বাচন করার অঙ্গীকার করেন তাহলে আমি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই। কয়েকদিনের মধ্যে আমি বিষয়টি পুরোপুরি জানাব।'
তিনি বলেন, '২০১৮ সালে নির্বাচনে রাজশাহী সদর আসনে আমাকে এবং বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুকে বিএনপি যৌথভাবে দল থেকে মনোনয়ন দিয়েছিল। পরে মিনু ভাইয়ের মনোনয়ন নির্বাচন কমিশনে বৈধতা পেলে দল থেকে আমার মনোনয়ন অবৈধ হয়ে যায়। নির্বাচন কমিশন যদি নির্বাচন স্বচ্ছ করে তাহলে ভোটে দাঁড়ালে নিশ্চয়ই বিপুল ভোটে জয়লাভ করব।'
সাহিদ হাসান দাবি করেন, তিনি রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এবং ছাত্র সংসদের ভিপি পদে ছিলেন। নাদিম মোস্তফা যখন জেলা কমিটির সভাপতি, তখন তিনি মহানগর ছাত্রদলের সভাপতিও ছিলেন। সর্বশেষ ২০১১ সালে মহানগর বিএনপির (মিজানুর রহমান মিনু-শফিকুল হক মিলন) কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। পরের কমিটিতে জায়গা না পেয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। বর্তমানে বিএনপির কোনো পদে নেই তিনি।
এদিকে সাঈদ হাসানের প্রার্থী হতে চাওয়ার বিষয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন রাজশাহী বিএনপির নেতারা। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বলেন, 'বিএনপির কেউ মনোনয়ন তুলবে না। সাঈদ বিএনপির সাবেক নেতা, এখন ব্যবসা নিয়ে আছেন। আমার বিশ্বাস তিনি শেষ পর্যন্ত ভোট করবেন না। তবে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোট করলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।'
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈসা বলেন, 'সাঈদ বিএনপির কমিটিতেই নেই। আর বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে। সাঈদ প্রার্থী হলে আমাদের কিছু যায়-আসে না। আমরা ভোট দিতেই যাব না।'
সাঈদ হাসানের প্রার্থিতা নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, 'আমি আগেও বলেছি, বিএনপি সরাসরি ভোটে না এলেও তাদের কূটকৌশল হিসেবে কাউকে না কাউকে আম, জাম, কাঁঠাল মার্কা দিয়ে দাঁড় করাবে। এটা তারই প্রতিফলন। আমরা যে উন্নয়ন করেছি, তাতে জনগণ আমাদের পক্ষে আছে। সাঈদ হাসান সম্পর্কে আমি কিছু বলতে চাই না। বিএনপি নেতারাই তার বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।'
রাজশাহী সিটি নির্বাচনে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয় পার্টি প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। তবে বিএনপি এখন পর্যন্ত কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। এমনকি ৫ সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার কথাও জানিয়েছে দলটি।
এদিকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে টানা চারবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান। ইসলামী আন্দোলন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির রাজশাহী মহানগর শাখার সহসভাপতি মুরশিদ আলম ফারুকী। আর জাতীয় পার্টি তাদের মহানগর কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম স্বপনকে দলীয় প্রার্থী করেছে।
এদিকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আনুষ্ঠানিক প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে ভোটের মাঠে নামলেন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। শনিবার বেলা ১১টার দিকে মহানগরীর গণকপাড়া মোড়ে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগরের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম স্বপনকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়।
পরে তিনি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এ সময় মেয়র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, 'আশা করছি নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমরা ভালো ফলাফল করব।' তবে সিটিতে সুষ্ঠ নির্বাচন না হলে এর প্রভাব আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পড়বে বলে মনে করেন জাতীয় পার্টির এই কেন্দ্রীয় নেতা।