ঘূর্ণিঝড় মোখা: কক্সবাজারে আশ্রয়কেন্দ্রে আসছে উপকূলের মানুষ
কক্সবাজার উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় 'মোখা'। ১৭০ কিলোমিটার গতিতে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড়টি। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, শনিবার সন্ধ্যার দিকেই কক্সবাজার ও এর কাছাকাছি উপকূলীয় এলাকায় এ ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব পড়তে শুরু করবে।
তাই সম্ভাব্য বিপদ সামনে রেখে সকল প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে কক্সবাজারের প্রশাসন। ইতিমধ্যে ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে সরিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা শুরু করেছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ জানিয়েছেন, 'প্রশাসনের পক্ষে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে মোখা মোকাবেলায় তৎপরতা চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা শুরু হয়েছে। নারী, বয়স্ক, শিশু এবং গাবাদি পশু সহ উপকূলীয় এলাকার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। জেলায় ৫৭৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে ক্রমাগত মানুষ আসতে শুরু করেছে। এক ঘন্টা পর পর আপডেট নেয়া হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত ৫ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন, এ সংখ্যা আরও বাড়বে।'
তিনি জানান, '১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক, পর্যাপ্ত গাড়ি রয়েছে। উপকূলীয় এলাকা জুড়ে মাইকিং করে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্রে আসছেন না, এমন কেউ থাকলে দুপুরের পর থেকে তাদেরকে জোরপূর্বক আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হবে। এক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ব্যবহার করা হবে।'
বিভীষণ কান্তি দাশ জানান, 'সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রশাসনের আলাদা প্রস্তুতি রয়েছে। যেখানে ৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে সকলকে আনা হয়েছে। দ্বীপের জন্য আলাদাভাবে ৫ মেট্টিক টন চাল ও নগদ ১ লাখ টাকা পাঠানো হয়েছে। সোনাদিয়া দ্বীপ থেকে মানুষকে মহেশখালীতে নিয়ে আসা হয়েছে। জেলার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ও টাকা মজুদ রয়েছে। উপজেলা ভিত্তিক যানবাহন রয়েছে।'
একই সঙ্গে রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, কক্সবাজার হোটেল মোটেল জোনের ৬৮টি আবাসিক হোটেল মোটেলকে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে।
মোখার কারণে সকাল থেকে কক্সবাজারের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন এবং গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। সাগর ক্রমাগত উত্তাল হচ্ছে। কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।
ঝুঁকিপূর্ণদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে কক্সবাজার উপকূলে পুলিশ মোতায়েন
কক্সবাজারের উপকূলে ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যেতে মাঠে নেমেছে পুলিশ।
শনিবার দুপুর ২ টার পর থেকে উপকূলে বসবাসকারি মানুষদের মাইকিং করে দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি কাজ করছে পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কক্সবাজারের পুরো উপকূলে প্রশাসনের অন্যান্য সংস্থার সাথে পুলিশ শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবে।
দুপুর ২ টার দিকে কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক, কুতুবদিয়াপাড়া, সমিতিপাড়া, ফদনারটেক উপকূলীয় এলাকায় প্রচারণা চালাতে যান কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম।
তিনি জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতের মুল কেন্দ্র কক্সবাজার। এখানে প্রাণহানি রোধ, ক্ষয়ক্ষতি কমানো, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসন সহ অন্যান্য সংস্থার সাথে পুলিশ মাঠে রয়েছে। যারা আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছে না তাদের বুঝিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে। সন্ধ্যার আগেই ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো নিশ্চিত করবে পুলিশ।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপকূলের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ৩২ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সমুদ্র সৈকতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ ও বিচকর্মীরা কাজ করছে।