ঘূর্ণিঝড় মোখায় রপ্তানিতে দেরি, ব্যয়বহুল এয়ারকার্গো পাঠানোর কথা ভাবছেন পোশাক রপ্তানিকারকরা
দিন কয়েক আগে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মূল আঘাত হেনেছে অতি-প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা। সাইক্লোন চলাকালে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে শিল্প উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। ঝড়ের কারণে পেছায় জাহাজে পণ্য রপ্তানির সময়। এতে দেশের প্রধান রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে সময়মতো পোশাক রপ্তানি ব্যাহত হয়। এই বাস্তবতায় খরচ বেশি হলেও বিমানে চালান পাঠানোর বিষয়ে ভাবছেন পোশাক রপ্তানিকারকরা। খবর রয়টার্সের।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় ক্রেতা ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে – ওয়ালমার্ট, গ্যাপ ইঙ্ক, এইচ অ্যান্ড এম, ভিএফ কর্প, জারা, আমেরিকান ঈগল আউটফিটার্স অন্যতম। কিন্তু, মোখার সময় যে দেরি হয়েছে তাতে এসব ব্র্যান্ডের কাছে গ্রীষ্মকালীন পোশাক সরবরাহে বাধা আসতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ে ভাসমান এলএনজি স্টোরেজ ও রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) এর পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে দেশের গ্যাস-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় গ্যাস সংকট দেখা দেয়। ফলে ঘন ঘন লোডশেডিং হয়েছে। ঝড়ে বাংলাদেশে হতাহতের ঘটনা ভয়াবহ নাহলেও অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে অনেক। শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি পর্যটন এলাকা কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে তাণ্ডবের চিহ্ন রেখে গেছে মোখা।
এরমধ্যেই স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফেরার চেষ্টা করতে হচ্ছে বাংলাদেশের ব্যবসাগুলোকে। পোশাক শিল্পের জন্যও এটা বড় আঘাত। অথচ দেশের ৮০ শতাংশ পণ্য রপ্তানিই করে এই খাত, যা আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের দুর্বল অবস্থার প্রেক্ষাপটে। গত এপ্রিল শেষে ডলার-রিজার্ভে প্রায় এক-তৃতীয়াংশে পতন হয়েছে বলে জানায় রয়টার্স।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম রয়টার্সকে বলেছেন, "শিপিং ডেডলাইন (জাহাজে চালান পাঠানোর নির্ধারিত সময়) মিস হওয়ায় এখন প্রয়োজনে বিমানে চালান পাঠাতে হবে। আমরা লোকসান দিতে বা ক্রেতা হারাতে চাই না।"
বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয়-বৃহৎ পোশাক রপ্তানিকারক। বিশ্ব অর্থনীতির মন্দাভাবে পোশাকের চাহিদা কমার প্রভাব পড়েছে এ খাতে। এই অবস্থায়, গত মার্চ ও এপ্রিলে দেশের রপ্তানিতে পতন হয়েছে।হাতেম জানান, জাহাজে পণ্য পরিবহনের খরচটা বায়াররাই দেন। কিন্তু, যখন বিমানে পণ্য পাঠাতে হয় তার পুরো খরচ উৎপাদককে বহন করতে হয়। এতে তাদের সীমিত মুনাফা মার্জিন আরো কমে যায়।
দেশের পোশাক শিল্পের সংশ্লিষ্টরা রয়টার্সকে জানান, বিমানে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে ৮ থেকে ১০ ডলার দিতে হয়। দেশের প্রধান রপ্তানি অঞ্চলগুলোর মধ্যে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া যথেষ্ট দূরে । এই বাস্তবতায়, বিমানে পণ্য পাঠিয়ে ক্রেতা ধরে রাখা গেলেও, বড় লোকসানের আশঙ্কা করা হচ্ছে। অথচ এই খাতে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশির কর্মসংস্থান জড়িত।
তাছাড়া, দেরির কারণে কিছু ক্রেতা মূল্যছাড়ের দাবী করছে। বাংলাদেশের এক পোশাক প্রস্ততকারকের কাছে ইউরোপের একটি ক্রেতার পাঠানো ই-মেইল দেখেছে রয়টার্স। সেখানে তারা পৌঁছে দেওয়া চালানের মূল্য ৫ শতাংশ কম নেওয়ার অনুরোধ করেছে। এইচঅ্যান্ডএম-কে সরবরাহকারী আরেকজন পোশাক কারখানা মালিকও জানান যে, তার শিপমেন্টে দেরি হয়েছে।
এর পেছনে গত দুই মাসের পরিস্থিতি দায়ী। প্রথমে দাবদাহ ও পরে সাইক্লোনের কারণে দেখা দেওয়া ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়েছে পোশাক উৎপাদকরা। সময়মতো চালান পৌঁছে দিতে হলে আর দম ফেলারও সুযোগ নেই। তাই অনেক কারখানা ব্যয়বহুল ডিজেল-চালিত জেনারেটর দিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখছে।
গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানার মালিক মোহাম্মদ নাসিরের মতে, "এভাবে চলতে থাকলে, আমাদের টিকে থাকাই কঠিন হবে।"
বিকেএমইএ'র সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, যদি সময়মতো চালান পৌঁছানো না যায়, তাহলে ক্রেতারা হয় বড় ডিসকাউন্ট চাইবে নাহয় অর্ডারই বাতিল করবে।
"বর্তমান অবস্থায় আগামী মৌসুমের পোশাকের অর্ডার হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নিত্যদিনের বিদ্যুৎ-বিভ্রাটে আমাদের নমুনা পোশাক উৎপাদনেও হিমশিম অবস্থা"- যোগ করেন তিনি।