নেটওয়ার্ক বাড়াতে গালফ এয়ার, জাপান এয়ারলাইন্সের সঙ্গে নতুন চুক্তিতে বিমান
গালফ এয়ার এবং জাপান এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যথাক্রমে কোড শেয়ারিং এবং ইন্টারলাইন চুক্তি করতে যাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
এর মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশ তার আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক আরও উন্নত করার পাশপাশি যাত্রী সক্ষমতা বাড়াতেও সমর্থ হবে।
সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিমানের সঙ্গে কোডশেয়ারিং চুক্তি করতে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশ সফরে আসবেন গালফ এয়ারের সিইও।
বাহরাইন-ভিত্তিক এই এয়ারলাইন্সটি ইউরোপে তাদের ফ্লাইট পরিচালনা সম্প্রসারিত করেছে। ফলে বিমান বাংলাদেশের আশা, এই চুক্তির মাধ্যমে এখানকার যাত্রীরা ইউরোপ অঞ্চলের আরও বেশি গন্তব্যে সহজে যেতে পারবেন।
তবে, গালফ এয়ারে ভ্রমণের সময় যাত্রীদের বিমানের বোর্ডিং কার্ড বহন করতে হবে। একইভাবে গালফ এয়ারের যাত্রীরা বিমান বাংলাদেশের মাধ্যমে ভ্রমণের সময় এয়ারলাইন্সটির বোর্ডিং কার্ড বহন করবেন।
কোড শেয়ারিংয়ের ফলে গালফ এয়ারের মাধ্যমে ইউরোপের আরও বিভিন্ন জায়গায় পরোক্ষভাবে বিমান যাত্রী পৌঁছে দিতে পারবে বলে উল্লেখ করেন বিমান বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, কোডশেয়ার চুক্তির আওতাধীন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা থেকে যে আয় হবে, তা উভয় এয়ারলাইন্স ভাগ করে নেবে।
এটি বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত জানিয়ে তিনি বলেন, এই প্রথম বিমান একটি কোডশেয়ার চুক্তিতে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।
"এটিও পরোক্ষভাবে এক ধরনের বহর সম্প্রসারণের মতোই," যোগ করেন তিনি।
ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) অনুসারে, কোডশেয়ার চুক্তি হল এয়ারলাইন্সের একটি ব্যবসায়িক ব্যবস্থা; এই ব্যবস্থায় দুই বা ততোধিক এয়ারলাইন্স একই ফ্লাইট শেয়ার করার ব্যাপারে সম্মত হয়, যেখানে একটি এয়ারলাইনে আসন কেনা হলেও প্রকৃতপক্ষে তা অংশীদার এয়ারলাইন দ্বারা একটি ভিন্ন ফ্লাইট নম্বরের অধীনে পরিচালিত হয়।
সারাবিশ্বে এয়ারলাইনগুলো বাজারে নিজেদের উপস্থিতি বাড়তে এবং প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখতে কোডশেয়ার ব্যবস্থায় সম্মত হয়ে থাকে।
এছাড়া, জাপান এয়ারলাইন্সের সঙ্গেও একটি আন্তঃলাইন চুক্তি করছে বিমান। এর ফলে বিমান বাংলাদেশের যাত্রীরা টোকিওর নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারবেন বলে জানিয়েছে বিমান সূত্র।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইট যাত্রীদের নারিতা (টোকিও) নিয়ে যাবে এবং সেখান থেকে জাপান এয়ারলাইন্স তাদেরকে পৌঁছে দেবে আটলান্টিক উপকূলের লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো মার্কিন শহরগুলোতে।
"অর্থাৎ, আমরা নারিতা হয়ে পরোক্ষভাবে যাত্রীদের আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছি," যোগ করেন তিনি।
এই ব্যবস্থায় উপকৃত হবে বিমানের নারিতা রুটও; কারণ ফ্লাইটটি জাপান এবং মার্কিন, উভয় শহরেই যাত্রী বহন করবে।
কাঠমান্ডু, কলকাতা বা দিল্লির যাত্রীরাও এই রুটকে আকর্ষণীয় মনে করবেন বলে জানান শফিউল আজিম।
চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা-নারিতা-ঢাকা রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালু করতে যাচ্ছে বিমান।
এছাড়া, নভেম্বরে ঢাকা-চেন্নাই-ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনাও রয়েছে বিমানের।
আইএটিএ অনুসারে, ইন্টারলাইন চুক্তির মাধ্যমে একটি এয়ারলাইন গ্রাহকের কাছে সেবা বিক্রি করে থাকে, যা অবশ্য সরবরাহ করে অন্য একটি এয়ারলাইন।
প্রয়োজন নতুন বিমানের
বিমান বাংলাদেশের এমডি জানান, ফ্লাইট চালুর ব্যাপারে বিভিন্ন রুট থেকে ব্যাপক সাড়া মিললেও, তাদের বহরে বিমানের ঘাটতি রয়েছে।
"আরও বিমান থাকলে আমরা আরও যাত্রী পাব। যেহেতু সিডনিতে আমাদের অনেক প্রবাসী রয়েছেন, তাই সিঙ্গাপুর বা ইন্দোনেশিয়া হয়ে অস্ট্রেলিয়ার শহরগুলোর রুটেরও ফ্লাইটের চাহিদা রয়েছে," যোগ করেন তিনি।
টরন্টো ও লন্ডনে ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানো হলে বিমান লাভবান হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
শফিউল আজিম উল্লেখ করেন, এই মুহূর্তে বিমান বাংলাদেশের যাত্রীবাহী বিমানের প্রয়োজন রয়েছে।
এছাড়া এয়ারবাসের সঙ্গে একটি অংশীদারিত্ব চুক্তি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "প্রযুক্তি স্থানান্তর, প্রশিক্ষণ, বিমানবন্দর পরিচালনা, বিমান কেনা সবই এই অংশীদারিত্বের অংশ।"
তিনি বলেন, বোয়িং-এর পক্ষ থেকেও একই ধরনের প্রস্তাব রয়েছে।