সরকারি নির্দেশনা: বজ্রপাত থেকে বাঁচতে করণীয়
সম্প্রতিকালে বাংলাদেশে বজ্রপাত অন্যতম প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এর আঘাতে প্রাণহানি ও হতাহতের খবর নিয়মিত আসছে। সেজন্য বজ্রপাতে প্রাণহানি ও হতাহতের ঘটনা এড়াতে সরকার কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর বজ্রপাতে ২৫০ জনের মৃত্যু হয়।
বজ্রপাতে প্রচুর সংখ্যক গবাদি পশু মারা যায় বা আহত হয়।
তথ্য অধিদপ্তরের (পিআইডি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত দেশে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতে হতাহতের ঘটনা ঘটে; আর এতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে বিস্তীর্ণ ও হাওর এলাকায়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশে বজ্রপাতে দুই হাজার ১৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বিবেচনা করে সরকার ২০১৬ সালে এটিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে।
মৃত্যু ও হতাহতের ঘটনা এড়াতে সরকার কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা জারি করেছে। সেগুলো হলো-
- বজ্রঝড় সাধারণত ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ মিনিট স্থায়ী হয়। এ সময়টুকু ঘরে অবস্থান করতে হবে। অতি জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে রাবারের জুতা পরে বাইরে যাওয়া নিরাপদ, এটি বজ্রঝড় বা বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা দেবে।
- বজ্রপাতের সময় ধানখেত বা খোলামাঠে যদি থাকেন তাহলে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসে পড়তে হবে।
- বজ্রপাতের আশঙ্কা দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। ভবনের ছাদে বা উঁচু ভূমিতে যাওয়া উচিত হবে না।
- বজ্রপাতের সময় যেকোনো ধরনের খেলাধুলা থেকে শিশুকে বিরত রাখতে হবে, ঘরের ভেতরে অবস্থান করতে হবে।
- খালি জায়গায় যদি উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, ধাতব পদার্থ বা মোবাইল টাওয়ার থাকে, তার কাছাকাছি থাকবেন না। বজ্রপাতের সময় গাছের নিচে থাকা বিপজ্জনক।
- বজ্রপাতের সময় ছাউনিবিহীন নৌকায় মাছ ধরতে না যাওয়াই উচিত হবে। সমুদ্রে বা নদীতে থাকলে মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে।
- যদি কেউ গাড়ির ভেতর অবস্থান করেন, তাহলে গাড়ির ধাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংযোগ রাখা যাবে না।
- বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিকে ধরার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। কারণ, আহত কিংবা মৃত ব্যক্তির শরীরে বিদ্যুৎ থাকে না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, বজ্রপাতে কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে। বজ্রপাতে আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস এবং হৃৎস্পন্দন দ্রুত ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। কয়েক মিনিটের মধ্যে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে পারলে বাঁচানো সম্ভব হতে পারে। বেশি দেরি হলে আহত ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে।
- বজ্রপাতে আহত হলেও কিছু কিছু মানুষের হৃদপিণ্ড বন্ধ হয়ে তাৎক্ষনিকভাবেই মারা যায়। আবার কারও-কারও হৃদপিণ্ড একটু বন্ধ হয়ে আবার চালু হয়। তাদের যদি হাসপাতালে আনা যায়, তখন বাঁচানো সম্ভব হতে পারে।
- যদি আহত ব্যক্তির হৃৎপিণ্ড সচল থাকে তাহলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে সিপিআর (কৃত্রিক শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা) দিতে হবে। সেজন্য সিপিআর সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি। সিপিআর দিয়ে হৃদপিণ্ড সচল রাখতে হবে। এর মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স বা কোনো গাড়ি ডেকে দ্রুত আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিতে হবে।