বড় জমায়েতের মধ্য দিয়ে আগামীকাল সরকার পতনের ১ দফা ঘোষণা দিচ্ছে বিএনপি
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আগামীকাল ১২ জুলাই থেকে সর্বাত্মক আন্দোলনের ডাক দিচ্ছে বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনের সকল দলও এক দফা দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দিতে যাচ্ছে। বিএনপি বড় শোডাউনের মধ্য দিয়ে সরকার পতনের এ এক দফা ডাক দিচ্ছে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, আন্দোলন চূড়ান্ত করতে আগামীকালের সমাবেশ সফল করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। পাশাপাশি দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছে বিএনপির হাইকমান্ড। সমমনা জোট ও দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে চলছে সিরিজ বৈঠক। ধারাবাহিক এইসব বৈঠকে সরকার পতন নিশ্চিত করতে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। একদফা আন্দোলন ঘোষণার পর সরকার বিরোধীদের আন্দোলনে বাধা দিলে দলটির করণীয় কি হবে তারও আলোচনা হচ্ছে এসব বৈঠকে। অতীতের নানা অভিজ্ঞতার আলোকে এবারের আন্দোলনের ছক অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে করছে বিএনপি।
এক দফা ঘোষণার পর রাজপথের পরিবেশ ও সরকারের মুভমেন্ট বিবেচনা করে নতুন নতুন কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। অতীতের মতো কর্মসূচি না দিয়ে সচিবালয় বা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও, ঢাকায় অবস্থান ইত্যাদি কর্মসূচির কথা ভাবছে দলটি।
গত দুইদিন যুগপৎ আন্দোলনের অন্য দলের সাথেও বৈঠক করে পরামর্শ নেয় বিএনপি।
জানা গেছে, বিএনপি এসব বৈঠকে একদফা আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে ঢাকায় সমাবেশ ও ঘেরাওয়ের কথা ভাবছে জানিয়ে আরো কী কী কর্মসূচি দেয়া যেতে পারে জোট নেতাদের সেই প্রস্তাবনা দেয়ার আহ্বান জানায় দলটি। তখন কেউ কেউ ঢাকায় অবস্থান ধর্মঘট, সচিবালয় ঘেরাও, নির্বাচন কমিশন ঘেরাও, গণভবন ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচির কথা বলেন। তবে বিএনপি হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস কর্মসূচিতে যেতে চায় না। অহিংস কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন শুরু করতে চায় দলটি।
জানা গেছে, বিএনপির এক দফা আন্দোলনের মূল টার্গেট হচ্ছে ঢাকা। বড় সমাবেশ করে সরকার পতনের অভিন্ন একদফা আন্দোলন গড়ে তুলতেই নানা পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
এ দফা ঘোষণার পর প্রতিটি কর্মসূচিতে বিপুল সমাগম ঘটিয়ে সরকারকে 'না' বলে দেয়ার টার্গেট নেয়া হচ্ছে। অতীত আন্দোলনের অভিজ্ঞতায় দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, ঢাকায় জোরালো আন্দোলন ছাড়া সরকার পতন সম্ভব নয়।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, এক দফা ঘোষণাপত্রে থাকবে- সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি, নির্বাচনকাল নিরপেক্ষ সরকার গঠন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন পুনঃগঠন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তি, মিথ্যা ও গায়েবী মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েশি সাজা বাতিল এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের দাবিতে ১ দফা কর্মসূচি।
সমাবেশ সফলের লক্ষ্যে গতকাল সোমবার নয়াপল্টনে প্রস্তুতি সভা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষকদলসহ প্রায় সবগুলো অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সমাবেশ ঘিরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এখন জমজমাট ও সরগরম।
নয়াপল্টনে বুধবারের সমাবেশের জন্য পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে সোমবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে দেখা করেন।
পরে খায়ের ভুঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, "আমরা পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে আমাদের বুধবারের সমাবেশের বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করেছি। আমরা সমাবেশ অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছি। আশা করি আমরা অনুমতি পাব।"
এছাড়াও কূটনৈতিকসহ বিভিন্ন মহলেও তৎপরতা বাড়িয়েছে দলটি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল যখন ঢাকায়, ঠিক তখনই সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দিতে যাচ্ছে বিএনপি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের আগে দলটি নিজ অবস্থানের সমর্থনে রাজপথে বড় জমায়াতের মধ্য দিয়ে শক্তি দেখানোর কৌশল নিয়েছে বলেও দলীয় সূত্র জানায়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'এ সরকারের যে সময় শেষ তা আগামীকাল জনসমাগমের মধ্য দিয়ে দেখতে পাবেন। এখন থেকে সরকারকে কোন ছাড় দেয়া হবে না।'
বিএনপি সূত্রে জানায় যায়, রাজধানী ঢাকার বাইরের আশেপাশের জেলাগুলো থেকেও আগামীকাল নেতাকর্মীরা যোগ দিবেন। সমাবেশটি নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে মহাসমাবেশে রূপ নিবে। ১ দফা ঘোষণার মধ্য দিয়ে আন্দোলনের তৃতীয় ঢেউ তৈরি হবে।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল টিবিএসকে বলেন, দলের নেতাকর্মীদের মনোবল অত্যন্ত দৃঢ়। তারা যেকোনো মূল্যে সমাবেশ সফলে প্রস্তুত। মোটামুটি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ঢাকা মহানগরসহ জেলা পর্যায়ের প্রায় সকল নেতাকর্মী উপস্থিত থাকবেন।
বিএনপি ছাড়াও গণতন্ত্র মঞ্চ, সমমনা জাতীয়তাবাদী জোট, ১২ দলীয় জোট, গণঅধিকার পরিষদ, এলডিপি, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য জোট ১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা দিবেন। সবার কর্মসূচি আলাদা হলেও দাবি হবে এক ও অভিন্ন।