আবদুল্লাহপুর থেকে যাত্রাবাড়ী: বিএনপির দ্বিতীয় দিনের পদযাত্রা চলছে
সরকার পতনের একদফা দাবিতে বিএনপিসহ ৩৬ দলের দুইদিন ব্যাপী পদযাত্রার দ্বিতীয় দিন আজ (১৯ জুলাই)। উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে যাত্রাবাড়ী (চৌরাস্তা) পর্যন্ত পদযাত্রা করবে আজ বিএনপি। সকাল থেকেই আব্দুল্লাহপুর পলওয়েল কারনেশন শপিং সেন্টারের সামনে জড়ো হতে থাকেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেও বিএনপি।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, "আমাদের কথা বলার অধিকার আদায় করতে হবে। ভোটের অধিকার আদায় করতে হবে।"
তিনি বলেন, "ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন সংবিধানের বাইরে আমরা যাবো না, আমরাও বলতে চাই আমরা সংবিধানের বাইরে যাবো না। সরকারের কাটাকাটি সংবিধান আমরা চাই না। আপনাদের তৈরী, খায়রুল হকের তৈরী সংবিধান আমরা চাই না। নিখুঁত যে সংবিধান যেখানে কোনো কাটাকাটি ছিল না সেই সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন চাই। আমরা আপনাদের অত্যাচারের জবাব দিবো। আপনারা শান্তি মিছিলের নামে অশান্তি তৈরী করছেন। আপনারা নোয়াখালী, লক্ষীপুরে আমাদের লোক মেরেছেন। আমরা মিছিল-মিটিং করবো আর বাঙলা কলেজ থেকে ইট মারবেন সেটা হবে না। বাংলার মানুষ প্রতিহত করবে। এই বাংলাদেশ কারো কোনো রাজ্য না। দেশের মানুষ বুকের রক্ত দিয়ে বাংলাদেশ অর্জন করেছে। আমরা গতকালের যে অত্যাচার করেছেন তার জবাব দেবো।"
এছাড়াও সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি ঢাকা উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, "এ অবৈধ সরকারকে বলতে চাই অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। সংসদ ভেঙে দাও। যদি তা না করো তবে এদেশের জনগণ টেনে নামাবে। ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচনে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর উপর হামলা দিয়েই প্রমাণ করে আপনাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচন আইসিইউতে ভর্তি হয়েছে।"
তিনি বলেন, "আমাদের জীবনের বিনিময়ে হলেও শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটাবো। সেদিন বেশি দূরে নয়, '৯০ এর মতো গণ-অভ্যুত্থান হবে। ইনশাআল্লাহ বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত। আমরা খালেদা জিয়াসহ সকল নেতাকর্মীর মুক্তি চাই।"
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবেদীন ফারুক বলেন, "মানুষ জড়ো হয়ে এ সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। যতই ধমক দেন ঢাকা জেগেছে, পালানোর পথ পাবেন না। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেবো না।"
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, "স্বৈরাচার বিরোধী যে আন্দোলন হয়েছিল সেই নেতৃবৃন্দ আজ মঞ্চে আছেন। নতুন প্রজন্মকে বলবো, আপনারা এ স্বৈরাচারী সরকারকে বিদায় করুন। আপনারা দেখেছেন এই সরকার কিভাবে জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে।"
"আজকে অলিখিত বাকশাল কায়েম করেছে এ সরকার। বাকশাল কায়েম করার জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। এদেশের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে," বলেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে পদযাত্রাটি মার্কেটের সামনে থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর- কুড়িল বিশ্বরোড- নতুনবাজার- বাড্ডা- রামপুরা ব্রিজ- মালিবাগের আবুল হোটেলের সামনে দিয়ে খিলগাঁও- বাসাবো- মুগদা- সায়েদাবাদ হয়ে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় গিয়ে শেষ হবে।
সরকার পতনের দাবিতে এক দফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় দুই দিনের 'পদযাত্রা' কর্মসূচি শুরু করেছে বিএনপি। অন্যদিকে বিএনপির এই কর্মসূচির বিপরীতে একই সময়ে 'উন্নয়ন শোভাযাত্রা' কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
রাজধানীর গাবতলী থেকে বিকাল ৪টায় পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজার পর্যন্ত বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয় গতকাল।
অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগ বিকেল ৪টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে একটি মিছিল শুরু করে, যা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে শেষ হয়।
প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকার বিভিন্ন অংশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় মঙ্গলবার।
তাছাড়া বিএনপি'র পদযাত্রা চলাকালে রাজধানীতে মিরপুর বাংলা কলেজের কাছে দলটির নেতাকর্মী ও আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (বাংলা কলেজ শাখা) মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এছাড়াও লক্ষ্মীপুরে বিএনপির পদযাত্রা চলাকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সাথে সংঘর্ষে কৃষক দলের এক কর্মী নিহত হন।নিহত মোঃ সজিব হোসেন (২৫) সদর উপজেলার চরশাহী ইউনিয়নের নুরুউল্লাহ গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে। লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
মঙ্গলবারের সংঘর্ষে তাদের প্রায় দুই হাজার নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে বিএনপি।