অস্ত্রসহ সুন্দরবনের ৮ জলদস্যু আটক
সুন্দরবনের জলদস্যু আসাবুর বাহিনীর প্রধানসহ ৮ জনকে দেশি-বিদেশি অস্ত্রসহ আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
রোববার দুপুরে র্যাব-৬ এর প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এর আগে শনিবার দিবাগত রাতে খুলনার দাকোপ ও মোংলার ইপিজেড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের আটক করা হয়।
আটকরা হলেন, আসাবুর সানা (৪৩), মোঃ শরিফুল ঢালী (৩৭), মোঃ শাহিন সানা (২৭), মোঃ ইস্রাফিল সানা (২৭), মোঃ শফিকুল ইসলাম (৩০), মোঃ রাকিব ফরাজি (২২), সোহান মৃধা (১৯), মোঃ আকবর আলী শেখ (২৫)। তারা খুলনা, বাগেরহাট ও নড়াইল জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২৩ জুলাই সুন্দরবনের ভদ্রা নদীতে বেশ কয়েকজন জেলেকে জলদস্যুরা অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে। সেখানে র্যাব-৬ অভিযান পরিচালনা করে অপহরণের সাথে জড়িত ৫ জন জলদস্যুকে গ্রেপ্তার করে এবং ১৪ জন জেলেকে উদ্ধার করে। গ্রেপ্তারকৃত জলদস্যুদের দেয়া তথ্য মতে অন্য দস্যুদের গ্রেপ্তার করতে নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার রাতে র্যাব-৬ এর একটি দল অভিযান পরিচালনা করে আসাবুর বাহিনীর সদস্যদের আটক করে। এসময়ে তাদের কাছ থেকে দেশী-বিদেশী অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জলদস্যুতার সাথে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়েও তথ্য দিয়েছে।
তিনি জানান, আসাবুর ২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনের দস্যু আকাশ বাবুর মৃত্যুঞ্জয় বাহিনীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে মৃত্যুঞ্জয় পার্শ্ববর্তী দেশে চলে গেলে আসাবুর বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াতেন ও বিভিন্ন বাহিনীর সাথে মিলে দস্যুতা করতেন। তার কাছে একটি ডাবল বেরেল বন্দুক ছিল এবং পরে কোস্টগার্ড তা উদ্ধার করে। ইতোপূর্বে একটি অস্ত্র মামলায় তিন বছর কারাভোগ করে ২০১৫ সালে জামিনে মুক্তি পান।
পরবর্তীতে ২০১৬ থেকে তিনি ছোট জাহাঙ্গীর বাহিনীর উপ-প্রধান ছিলেন। ২০১৯ সালে ছোট জাহাঙ্গীর র্যাবের নিকট আত্মসমর্পণ করলেও আসাবুর আত্মসমর্পন করেননি। ওই সময়ে তিনি বিভিন্ন বাহিনীর সাথে থেকে জেলেদের অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। চলতি বছরের ২০ জুলাই থেকে তার সহযোগীদের নিয়ে সুন্দরবনে চার দিন অবস্থান করে ২৩ জুলাই ১০ জন জেলেকে জিম্মি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে গ্রহণ করেন। মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ উত্তোলনের সাথে জড়িত মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসায়ী রবিউলকেসহ অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তার করে ইতোমধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে র্যাব।
সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে এ পর্যন্ত র্যাব ৩৭০টি সফল অভিযান পরিচালনা করে ৯১১ জন জলদস্যুকে গ্রেপ্তার ও ২০২৮টি অস্ত্র এবং ৪২ হাজার ৬৯০ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা করেছে। র্যাবের আহবানে ২০১৬ সাল হতে ২০১৮ সালের ০১ নভেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবন অঞ্চলের ৩২টি জলদস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন জলদস্যু ৪৬২টি অস্ত্র ও ২২ হাজার ৫০৪ রাউন্ড গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেছে। এ প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ০১ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুন্দরবনকে 'দস্যুমুক্ত সুন্দরবন' ঘোষণা করেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর থেকে সুন্দরবনে বড় ধরনের কোন জলদস্যু বাহিনী সৃষ্টি হয়নি। মাঝে মধ্যে কয়েকজন মিলে দস্যুতা করার চেষ্টা করেছেন। জলদস্যুরা যখনই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছেন তখনই র্যাব অভিযান পরিচালনা করে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।