দেশের বৃহত্তম স্টিল আর্চ ব্রিজ নির্মাণ করবে চীনের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়াম
ময়মনসিংহে দেশের বৃহত্তম স্টিল আর্চ ব্রিজ কেওয়াটখালী সেতু নির্মাণ করবে চীনা ও বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মের একটি কনসোর্টিয়াম।
স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের সাথে চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের নেতৃত্বে এ কনসোর্টিয়ামের সাথে আগামী মাসে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। প্রকল্প পরিচালক নূর ই-আলম এ তথ্য জানিয়েছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে।
সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ইতোমধ্যেই এ প্রকল্পের ভৌত কাজের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। ঠিকাদার কর্তৃক সরঞ্জামাদি সরবরাহের পর অক্টোবরে এর কাজ শুরু হবে বলে জানান নূর-ই-আলম।
সিডনি হারবার সেতুর আদলে নির্মিত হতে যাওয়া কেওয়াটখালী সেতুটির নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ২,১৩৮ কোটি টাকার একটি চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০২১ সালের আগস্টে ৩,২৬৩.৬৩ কোটি টাকা আনুমানিক ব্যয়ে প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়।
এ প্রকল্পের জন্য এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ১,৯০৯.৮০ কোটি টাকার ঋণ দেবে এবং বাকি অর্থ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে দেবে।
প্রকল্পের অধীনে ময়মনসিংহের কেওয়াটখালীতে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর ৩২০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি স্টিল আর্চ ব্রিজসহ ১.১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ করা হবে।
সেতুতে ধীরগতির যানবাহনের জন্য দুটি পৃথক লেনসহ ৬.২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চার লেনের অ্যাপ্রোচ রোড, সম্মিলিতভাবে ৬৭১ মিটার দীর্ঘ তিনটি রোড ওভারপাস, ১২০ মিটার দৈর্ঘ্যের দুটি রেল ওভারপাস, একটি টোল প্লাজা এবং সেতুসংলগ্ন বিশ্রাম নেওয়ার স্থান থাকবে।
৩২০ মিটার দীর্ঘ স্টিল আর্চের মূল ব্রিজটিতে কোনো জেটি থাকবেনা। দুই প্রান্তে নদীর তীর ঘেঁষে শুধু দুটি জেটি স্থাপন করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান পদ্ধতিতে সেতু নির্মাণ হলে অন্তত পাঁচ থেকে ছয়টি জেটির প্রয়োজন হতো। এটা করলে নদীর প্রবাহ বন্ধ বাধাগ্রস্ত হতো।
সূত্র জানায়, হাতিরঝিল প্রকল্পসহ দেশের বিভিন্ন প্রকল্পে স্বল্প পরিসরে এ ধরনের স্টিল আর্চ ব্রিজ বসানো হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক টিবিএসকে বলেন, সিসিজিপি এর আগে প্রকল্পের জন্য তত্ত্বাবধায়ক পরামর্শদাতা নিয়োগে প্রায় ৬০ কোটি টাকার একটি প্রস্তাব অনুমোদন করে।
তিনি বলেন, এলইএ অ্যাসোসিয়েটস সাউথ এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড, ইন্ডিয়া এবং ইয়োঙ্গামা ইঞ্জিনিয়ারিং কো লিমিটেড, কোরিয়ার যৌথ উদ্যোগের সাথে সাব-কন্ট্রাক্টর দেশউপদেশ লিমিটেড এবং ক্রান্তি অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড, বাংলাদেশ নকশা পর্যালোচনা এবং নির্মাণ তত্ত্বাবধানে কাজ শুরু করেছে।
এ সেতু কেন প্রয়োজন?
২০১৫ সালে ময়মনসিংহ বিভাগ এবং ২০১৮ সালে সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর স্থানীয় জেলা ও উপজেলা থেকে ময়মনসিংহ অভিমুখে যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে; যার ফলে সেতুসহ শহরে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলার মানুষ এই রুটেই ঢাকায় যাতায়াত করে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ব্রহ্মপুত্রের ওপর শম্ভুগঞ্জে ১৯৯১ সালে নির্মিত দুই লেনের সেতুর ধারণক্ষমতা ক্রমবর্ধমান যানবাহনের চাহিদা মেটাতে কোনোভাবেই পর্যাপ্ত নয়।
সেতুটি যানজট কমানোর পাশাপাশি আঞ্চলিক বাণিজ্য ও যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে ময়মনসিংহ বিভাগ এবং এর আশেপাশের এলাকার মানুষের জীবন ও জীবিকা সহজ করবে বলে আশা করছেন তারা।
এআইআইবি ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য প্রস্তুত করা একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, "কেওয়াটখালী সেতুটি ঢাকা-ময়মনসিংহ-ভারত সীমান্ত করিডোরের অংশ হবে, যা আঞ্চলিক এবং স্থানীয় উভয় সংযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।"
এই সেতুটি ময়মনসিংহ বিভাগের উত্তর-পূর্ব ভারতীয় সীমান্তে অবস্থিত তিনটি স্থলবন্দর- শেরপুর জেলার নাকুগাঁও স্থলবন্দর, গোবরাকুড়া স্থলবন্দর এবং ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট স্থলবন্দর থেকে ব্যবসায়িক পণ্যের প্রবাহকে সহজ করবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রশমিত হবে অন্যান্য সমস্যাও
প্রকল্প পরিচালক নূর ই আলম বলেন, ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হলে মূল কাজ শুরু করতে আর কোনো বাধা থাকবে না।
তবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, কিছু জটিলতার কারণে কাজ শুরুর আগেই প্রকল্পটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এ লক্ষ্যে চলতি মাসের শেষে বিভাগীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (ডিপিইসি) সভা আয়োজন করবে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় কর্মকর্তাদের বেতন বাবদ অর্থ বরাদ্দ থাকলেও কর্মচারীদের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ নেই।
ফলে প্রকল্পে নিয়োজিত ১৪তম গ্রেডের দুই জরিপ কর্মচারীর বেতন দেওয়া হচ্ছে না।
এছাড়া প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বিস্তারিত ব্যয়ের হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি; তাছাড়া সংশ্লিষ্ট ইউটিলিটি স্থানান্তর করতে প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থের চেয়ে বেশি ব্যয় হচ্ছে।
সূত্র জানায়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব সমস্যার সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা হবে।