এক দশকে বিশ্বের ৪০টি দেশে রপ্তানি সম্প্রসারণ করেছে রহমান জুট স্পিনার্স
প্রতিষ্ঠার মাত্র এক যুগেই বিশ্বের ৪০টি দেশে গুণগত মানসম্পন্ন পরিবেশবান্ধব জুট ইয়ার্ন রপ্তানি করছে রাজশাহীর রহমান জুট স্পিনার্স প্রাইভেট লিমিটেড।
কোম্পানিটি বছরে ২৫ হাজার মেট্রিক টন জুট ইয়ার্ন, ক্লথ ও ব্যাগ রপ্তানি করছে, যার বার্ষিক টার্নওভার ২০০ কোটি টাকা। কারখানাকে আরও বড় করার উদ্যোগ নিয়েছে কোম্পানি, যেটি বাস্তবায়িত হলে বছরে আরও ১০ হাজার জুট ইয়ার্ন বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
রহমান জুট স্পিনার্স প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, "আমরা বর্তমানে তুরস্ক, মিশর, চীন, ইউরোপ, আমেরিকা, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতসহ বিশ্বের ৪০টি দেশে কার্পেট ইয়ার্ন রপ্তানি করি।"
"জুট ইয়ার্ন উৎপাদনের পাশাপাশি আমরা জুট ব্যাগ ও ক্লথ উৎপাদন করি যা ভারত ও আফ্রিকার দেশে রপ্তানি হয়। বিশেষ করে আফ্রিকায় কফি ব্যাগ রপ্তানি করা হয়," যোগ করেন তিনি।
রহমান জুট স্পিনার্স প্রাইভেট লিমিটেডের সেলস পারফরম্যান্স থেকে দেখা গেছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে কোম্পানিটি ৯,৪৭৬.০৩ মেট্রিক টন বিদেশে রপ্তানি করে, যার মূল্য ৭.২০ মিলিয়ন ইউএসডি ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১০.১০ মিলিয়ন ইউএসডি ডলার মূল্যের ১১,৬৭৯ মেট্রিক টন রপ্তানি করে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৩ হাজার মেট্রিক টন জুট ইয়ার্ন, ক্লথ ও ব্যাগ রপ্তানি করে- যার মূল্য ১২.০৯ মিলিয়ন ইউএসডি ডলার।
রাজশাহীর পবার মাহিন্দ্রা এলাকায় প্রায় ২০ একর জমির ওপর ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রহমান জুট স্পিনার্স প্রাইভেট লিমিটেড। তবে কারখানাটি থেকে উৎপাদন শুরু হয় ২০১২ সাল থেকে। সেখান থেকে উৎপাদিত হয় শতভাগ রপ্তানিযোগ্য জুট ইয়ার্ন, ক্লথ ও ব্যাগ।
শুরুতে কারখানার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রতিদিন ৩৫ মেট্রিক টন। পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬০ মেট্রিক টনে। বর্তমানে প্রতিদিন ৮০ মেট্রিক টন উৎপাদন করে এই কোম্পানি।
মো. ফজলুর রহমান বলেন, "২০০৫-০৬ সালের দিকে আমরা রহমান জুট মিল স্থাপন করি। সেখানে জুট ব্যাগ তৈরি করা হতো। সেখানকার পাঁচবছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা জুট কার্পেট ইয়ার্ন ও হেসিয়ান ক্লথ তৈরির উদ্যোগ নিই।"
"সেই উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় রহমান জুট স্পিনার্স প্রাইভেট লিমিটেড স্থাপিত হয়। কারখানা স্থাপনের পর আমরা পরিবেশবান্ধব ভালো মানের ইয়ার্ন উৎপাদন করতে শুরু করি। দেশের মধ্যে পরিবেশবান্ধব জুট ইয়ার্ন উৎপাদনে আমরাই এগিয়ে রয়েছি। আমাদের উৎপাদিত জুট ইয়ার্ন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত 'ইন্টারটেক' কোম্পানি দ্বারা পরীক্ষিত ও সমাদৃত," যোগ করেন তিনি।
বর্তমানে রহমান জুট স্পিনার্স প্রাইভেট লিমিটেডের কারখানায় ২,০০০ জন শ্রমিক তিন শিফটে কাজ করেন। শুক্রবার ব্যতিত সপ্তাহের ছয়টি দিনই কারখানায় উৎপাদন চলে। এখন পাটের মৌসুম হওয়ায় প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৮ ট্রাক পাট তারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রয় করছেন। তবে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো থেকেই তারা পাট ক্রয় করে।
ফজলুর রহমান বলেন, "আমাদের টার্গেট থাকে একদম প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি পাট ক্রয় করা। আমরা ইতোমধ্যে নাটোরের চাঁচকৈড় বাজারে পাট ক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করেছি। আগামীতে প্রতিটি জেলায় পাটক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করার লক্ষ্য রয়েছে।"
এখন পাটের মৌসুম হওয়ায় বেশি পাট ক্রয় করতে হয়। তবে সারাবছর পাট ক্রয় চলে বলে জানান তিনি।
ফজলুর রহমান আরও জানান, দেশে ১৫০টির মতো জুট ইয়ার্ন উৎপাদনকারী মিল রয়েছে, যার মধ্যে ১০টিই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে।
প্রায় চার লাখ মেট্রিক টন জুট ইয়ার্নের একটি বৈশ্বিক বাজার রয়েছে। তবে স্থানীয় বাজারে জুটের দাম বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানি কমে গেছে বলে জানান তিনি।
"আমরা সবমিলে এখন দুই থেকে আড়াই লাখ মেট্রিক টন চাহিদা পূরণ করতে পারি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আরও বাড়ানো হলে এবং স্থানীয় বাজারে জুটের মূল্য ঠিকভাবে মনিটরিং করা গেলে আমাদের দেশ থেকে আরও জুট ইয়ার্ন বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে," যোগ করেন ফজলুর রহমান।