জলাবদ্ধতা রোধে খাল, নালার তলদেশ পাকা না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
খাল বা নালা সংস্কারে সময় এগুলোর তলদেশ পাকা না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর মতে, তলদেশ পাকা করলে পানি তলদেশ দিয়ে মাটির নীচে যেতে পারে না। ফলে বৃষ্টিতে পানি উপছে পড়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে এবং জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) শেরে বাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দেন। অতীতে কোথাও কোথাও এমন ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে তিনি ভবিষ্যতে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় এরকম যেন না ঘটে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গণমাধ্যমকে বলেন, সম্প্রতি হালকা বৃষ্টিতেও বরিশাল ও চট্টগ্রামের কিছু অংশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, ১৫-২০ বছর আগে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামে চাকতাই খালের বেশিরভাগ অংশের তলদেশ পাকা করা হয়েছে। পাকা তলদেশের খালে ধীরে ধীরে বালু-মাটি, পলিথিন ও আবর্জনা পড়ে সেটির গভীরতা কমেছে। এতে অল্প বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
এর আগে, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত এক একনেক সভায় চট্টগ্রাম নগরীর চাকতাই খালসহ ছোট ছোট খালের তলদেশ সিমেন্ট-কংক্রিটে পাকা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময়ও তিনি দেশের কোথাও কোনো ধরনের উন্নয়নকাজে খালের তলদেশ কংক্রিটে বাঁধাই না করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
হাসপাতালের সরঞ্জাম
মঙ্গলবার বৈঠকের পর পরিকল্পনা মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, লোকবলের অভাবে বাংলাদেশের অনেক হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি ব্যবহার না হওয়ার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, "আমার হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করি, যন্ত্রপাতি কেনা হয়, কিন্ত দেখা যায় যন্ত্রপাতি বক্স থেকেও খোলা হয় না। জনবলের অভাবে এসব যন্ত্রপাতি পড়ে থাকে, ব্যবহার হয় না।"
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে এ বিষয়ে সাবধান হতে বলেছেন সরকার প্রধান। একইসঙ্গে ভবন নির্মাণ ও জনবল নিয়োগ সমান্তরালভাবে করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
যশোর, কক্সবাজার, পাবনা ও নোয়াখালীতে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও অন্যান্য ভবন নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদনের সময় তিনি এ নির্দেশ দেন।
পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিৎ কর্মকার জানান, প্রকল্পটি ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল। এখন ভারতীয় ঋণের পরিবর্তে সরকারি তহবিলের অর্থায়নে বাস্তবায়নে হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারতীয় ঋণের প্রকল্পে বাস্তবায়নের দীর্ঘ সময় লাগে। এ কারণে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ প্রকল্পটি ভারতীয় ঋণের পরিবর্তে সরকারি তহবিলের ঋণে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস
এদিকে মূল্যস্ফীতি কমাতে আবারও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, "মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকারের বেশ কিছু পলিসি রয়েছে। আরো কী কী করা যায়, তা বের করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে তিনি সরকারি ব্যয় কমাতেও পুনরায় নির্দেশনা দিয়েছেন।"
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অহেতুক ব্যয় এবং অপচয় বন্ধ করতে হবে। তবে প্রয়োজনীয় ব্যয় বন্ধ করা হবে না।
একইসঙ্গে, প্রধানমন্ত্রী যেসব প্রকল্প শেষের দিকে আছে- ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কাজ শেষে হয়েছে- সেগুলোকে উচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
সংশোধিত প্রকল্প
মঙ্গলবারের একনেক সভায় মোট ২০,০৫৭ কোটি টাকার মোট ২০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে সাতটি প্রকল্প সংশোধিত। সংশোধিত প্রকল্পগুলোর ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
সংশোধিত ৭ প্রকল্পের ব্যয় শুরুতে ছিল ৬,০৪১ কোটি টাকা। নতুন করে এসব প্রকল্পে ৮,৭৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফলে এসব প্রকল্পে ব্যয় বেড়েছে ৪৫.৫৮ শতাংশ।
এছাড়া, আলাদাভাবে ৫ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৪টি প্রকল্পের মেয়াদ পঞ্চমবারের মতো বাড়ানো হয়েছে। আর একটি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে চারবার।
বারবার মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মলেনে পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, অনেক কারণে প্রকল্পে মেয়াদ ও ব্যয় বাড়াতে হয়। অনেক সময় নতুন যন্ত্রপাতি কিনতে হয়, ডলার মূল্য বেড়ে যাওয়া, প্রকল্প পরিচালক না থাকার কারণে প্রকল্পগুলো সময়মতো বাস্তবায়ন হয় না।
পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিৎ কর্মকার জানান, "প্রকল্পের ঠিকাদারদের কারণেও সময় মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায় না। যেমন- একটি প্রকল্পের ঠিকাদার কাজ ফেলে চলে যাওয়ার কারণে প্রকল্পটির কাজ আটকে যায়।"