সুন্দরবন বন্ধ থাকার সময় বন অপরাধ বেড়ে যায় কয়েকগুণ
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বছরে ৯২ দিন বন বন্ধ থাকার সময় সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ ধরা ও হরিণ শিকারের মতো বন অপরাধ অন্যান্য সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা, বন্যপ্রাণী ও নদী-খালের মাছের বিচরণ ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় প্রতি বছর তিন মাস (জুন–আগস্ট) সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশ, সাধারণ মানুষের চলাচলসহ নদী ও খালে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় ও সরকার থেকে কোনো আর্থিক সহায়তা না পাওয়ায় এই সময় বনজীবীরা জীবিকা নির্বাহের জন্য বিষ দিয়ে মাছ ধরা এবং হরিণ শিকারের মতো কাজ করেন।
জীবিকার জন্য সুন্দরবনের ওপর প্রায় ৭০ হাজার পরিবার নির্ভরশীল।
২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত গবেষকরা সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁইপাই রেঞ্জের চাঁদপাই এলাকা ও পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের মুন্সিগঞ্জ এলাকার ৬০ জন বনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছেন।
২০২২ ও চলতি বছর সুন্দরবন বন্ধ থাকার সময়ে অপরাধের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বন্ধ থাকার সুযোগে একশ্রেণির অসাধু জেলে অবৈধভাবে সুন্দরবনের মধ্যে প্রবেশ করে বনের গহীনে চিংড়ি শুকানোর স্থান গড়ে তোলেন। ওই স্থান তৈরি করতে কাটা হয় গাছ। আর চিংড়ি ধরতে সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে প্রয়োগ করা হয় বিষ। চিংড়ি শুকাতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় সুন্দরী গাছও।
গত বছর খুলনা রেঞ্জ থেকে কমপক্ষে পাঁচটি চিংড়ি শুকানোর স্থান চিহ্নিত করে তা উচ্ছেদ করেছে বন বিভাগ। ওই সময় অন্তত ১ হাজার কেজি শুঁটকি জব্দ করা হয়। আর বিষ দিয়ে ধরা চিংড়ি জব্দ করা হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কেজি। এসব কাজে জড়িত থাকার অপরাধে অন্তত ২৫ জনের নামে মামলা করে বন বিভাগ।
এ বছরের জুন থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে ১৪টি ট্রলার, ২৪৮টি নৌকা, একটি পিকআপ, ৫টি মোটরসাইকেল জব্দ করেছে বন বিভাগ। এ সময় ১ হাজার কেজিরও বেশি শুঁটকি চিংড়ি ও তাজা চিংড়ি আটক করা হয়েছে। প্রায় ৩০০ আসামির বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। এ সময় বিষের বোতল, হরিণধরা ফাঁদও জব্দ করেছে বন বিভাগ।
জানতে চাইলে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের বলেন, 'বন বন্ধ থাকার সময়ে বন অপরাধ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। স্বল্প লোকবল দিয়ে এত বড় বনের নিরাপত্তা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'বনজীবীদের বিকল্প খাদ্য সহায়তা দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সিদ্ধান্তটি পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় হয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।'