চট্টগ্রাম বন্দর: ৮ মাসে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমেছে ১৫.৪%
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট- এ আট মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি এবং রপ্তানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কম হয়েছে ১৫.৪ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বন্দরে ইয়ার অন ইয়ার আমদানি রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের তুলনায় এখনো স্বাভাবিক নয় আমদানি রপ্তানি। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালের প্রতি মাসেই আমদানি রপ্তানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমেছে।
ব্যবসায়ী এবং বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি আমদানি রপ্তানি পরিস্থিতি। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে কখনো আমদানি বাড়লে আবার রপ্তানি কমছে। আবার রপ্তানি বাড়লেও আমদানি কমছে। যুদ্ধের কারনে বিদেশী ক্রেতারা তৈরী পোষাক নেওয়া কমিয়ে দেওয়ায় রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব।
এই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের আগষ্টে জুলাই মাসের তুলনায় পণ্যবাহী আমদানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমেছে প্রায় ৭.৩৩ শতাংশ। তবে আমদানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমলেও আগষ্ট মাসে বেড়েছে রপ্তানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং। ২০২৩ সলের আগষ্ট মাসে জুলাই মাসের তুলনায় ৯.২৪ শতাংশ রপ্তানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে।
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আগষ্ট পর্যন্ত ৮ মাসে আমদানি পন্যবাহী কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৮১১৪১১ টিইইউ। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগষ্ট পর্যন্ত আমদানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিলো ৯৫৬৮৩৭ টিইইউ। ২০২২ সালের আট মাসের তুলনায় ২০২৩ সালের আটমাসে আমদানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কম হয়েছে ১৫.২০ শতাংশ বা ১৪৫৪২৬ টিইইউ।
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে ৮.১১ লক্ষ টিইইউ (২০ ফুট সমতুল্য ইউনিট) আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার হ্যান্ডেল করা হয়, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে প্রায় ৯.৫৬ লক্ষ টিইইউ হ্যান্ডেল করা হয়েছিল।
২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় এ বছরের প্রথম আট মাসে বন্দরে হ্যান্ডেল করা আমদানি কন্টেইনারের পরিমাণ ১৫.২০% বা প্রায় ১.৪৫ টিইইউ কমেছে।
এ বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় ৪.৮০ লাখ টিইইউ রপ্তানি কন্টেইনার হ্যান্ডেল করা হয়, যেখানে গত বছরের একই সময়ে প্রায় ৫.৭১ লাখ টিইইউ হ্যান্ডেল করা হয়।
২০২২ সালের আট মাসের তুলনায় ২০২৩ সালের আটমাসে রপ্তানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কম হয়েছে ১৬ শতাংশ বা ৯০,২৭০ টিইইউ।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের আগস্টে বন্দরে হ্যান্ডেল করা আমদানি কন্টেইনারের পরিমাণ ছিল ১.০৫ লাখ টিইইউ, যা গত বছরের একই মাসে হ্যান্ডেল করা ১১.৪৯ লাখ টিইইউ থেকে ৯,৮৪৫ টিইইউ কম।
চট্টগ্রাম বন্দর এ বছরের আগস্টে প্রায় ৬৫,৪৬১ টিইইউ রপ্তানি কন্টেইনার হ্যান্ডেল করেছে– যেখানে গত বছরের আগস্টে ৭৫,৬৯৭ টিইইউ কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং হয়েছে।
এই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের আগস্টে জুলাই মাসের তুলনায় পণ্যবাহী আমদানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমেছে প্রায় ৭.৩৩ শতাংশ। তবে আমদানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমলেও আগস্টে বেড়েছে রপ্তানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং। এ বছরের আগস্টে জুলাই মাসের তুলনায় ৯.২৪ শতাংশ রপ্তানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির নতুন নির্বাচিত সভাপতি ওমর হাজ্জাজ টিবিএসকে বলেন, মুলত রশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ডলার সংকট তৈরি হয়। এর প্রভাবে ব্যাংকগুলোও আমাদনিকারকদের চাহিদা অনুযায়ী এলসি ওপেন করতে পারছিল না। আমদানি রপ্তানিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে।
তিনি আরো বলেন, "বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে বিনিয়োগ কমে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। যেহেতু সামনে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ২০২৪ সালের দেশে নতুন বিনিয়োগ এবং আমদানি রপ্তানি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে প্রত্যাশা করছি।"
সাইফ ম্যারিটাইম লিমিটেডের সিওও আবদুল্লাহ জহির টিবিএসকে বলেন, "বৈশ্বিক মন্দার কারণে বিদেশি ক্রেতারা এখন বাংলাদেশ থেকে তৈরী পোশাক আমদানি তুলনামুলক কমিয়ে দিয়েছে। এ কারণে মুলত রপ্তানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এখনো আগের মতো স্বাভাবিক হয়নি।"
"ডলার সংকট কাটাতে এলসি খোলার কড়াকড়ি এখন কিছুটা শিথিল হয়েছে। সামনে আমদানি রপ্তানিতে ইতিবাচক কিছু দেখার অপেক্ষায় আছি," বলেন তিনি।
চট্টগ্রাম বন্দর প্রতিবছর ৩০ লাখ থেকে ৩২ লাখ টিইইউ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করে।
২০২২ সালে ২০২১ সালের তুলনায় কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমে যাওয়ায় বৈশ্বিক ১০০ বন্দরের তালিকা থেকে ৩ ধাপ পিছিয়ে যায় চট্টগ্রাম বন্দর। সম্প্রতি প্রকাশিত হওয়া লয়েডস লিস্টে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ৬৭তম। তার আগের বছরে এ বন্দরের অবস্থান ছিল ৬৪তম।