এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: প্রথম তিন সপ্তাহে ৫ কোটি টাকার বেশি টোল আদায়
গত ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার পর থেকে ৫ কোটি টাকার বেশি টোল আদায় করেছে কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্প পরিচালক এএইচএমএস আখতার জানান, রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মোট ৬ লাখ ২১ হাজার ১৫২টি যানবাহন চলাচল করেছে।
গত ২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার গাড়িবহরে থাকা ২৫টি গাড়ির জন্য প্রতিটি গাড়ির জন্য ৮০ টাকা হারে দুই হাজার টাকা টোল পরিশোধের মধ্য দিয়ে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর-ফার্মগেট অংশের উদ্বোধন করেন।
গত ৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টায় বিমানবন্দর থেকে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ফার্মগেট পর্যন্ত অংশটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয় কর্তৃপক্ষ। এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেটে পৌঁছতে সময় লাগে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিট।
এএইচএমএস আখতার বলেন, "আমরা আগে ধারণা করেছিলাম প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০ হাজার যানবাহন এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করবে।"
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হলে রাজধানীর কাওলা থেকে কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে কুতুবখালী এলাকা পর্যন্ত চলাচল করবে।
আখতার বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে বলেন, "আমরা আশা করছি এটি সম্পন্ন হলে প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে পারবে।"
এক প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের নকশা অনুযায়ী যানবাহন ৮০ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিতে চলতে পারে, কিন্তু তারা র্যাম্পে ৬০ কিলোমিটার/ঘণ্টা এবং ৪০ কিমি/ঘণ্টা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রেখেছে।
তারা এখনও গতিসীমা লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ শুরু করতে পারেনি। যদিও ইতোমধ্যে এক্সপ্রেসওয়েতে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং অন্যান্য সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বাস চলাচল শুরু করেছে। যাত্রীরা এখন মাত্র ৩৫ টাকায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পার হচ্ছেন।
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের খেজুর বাগান থেকে জসিমউদ্দিন রোড পর্যন্ত নতুন বাস রুটের ঘোষণা দেন বিআরটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে তিনটি ডিপো থেকে মোট আটটি বাস চলাচলের কথা ছিল। এক্সপ্রেসওয়ের উভয় প্রান্ত থেকে যাত্রীরা বাসে উঠতে পারবেন।
তবে এক্সপ্রেস হাইওয়েতে চলাচলকারী বিআরটিসি বাসের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২টিতে।
উত্তরা-ফার্মগেট বিআরটিসি বাস রুটের ফার্মগেট বাস কাউন্টারে কর্মরত বিআরটিসি বাস কাউন্টারের কর্মী বিশ্বজিৎ বলেন, "বাসের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় যাত্রীরা সন্তুষ্ট, আমরাও সন্তুষ্ট।"
তিনি আরও বলেন, ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে আটটি দোতলা বাস চলাচল শুরু করে।
বিশ্বজিৎ জানান, ফার্মগেট বাস কাউন্টার থেকে উত্তরা পর্যন্ত প্রতি ১০ মিনিটে একটি করে বাস চলাচল করছে। এক্সপ্রেসওয়ের উভয় প্রান্তে যানজটের কারণে বাসগুলো কখনও কখনও দেরি করে।
তিনি বলেন, "যাত্রীদের সেবা আরও উন্নত করতে আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। যাত্রী সংখ্যা বাড়ানোর জন্য রুটে বাসের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, শিগগিরই বাসের সময়সূচি কঠোরভাবে বজায় রাখা যেতে পারে।"
তানজিলা রহমান নামে এক যাত্রী রবিবার বিকালে ফার্মগেট বিআরটিসি এক্সপ্রেসওয়ে বাস কাউন্টার থেকে উত্তরায় যাওয়ার জন্য টিকিট কিনছিলেন।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, "তিনি সকালে একটি চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য এসেছিলেন এবং বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে ইন্দিরা রোডে পৌঁছেন। আমার পরিষেবাটি খুব ভালো লেগেছে। বিমানবন্দর থেকে এখানে পৌঁছাতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম সময় লেগেছে। আমি একই পথ দিয়ে ফিরে যাচ্ছি।"
রায়হান নামে আরেক যাত্রী জানান, আগে বাসা থেকে কারওয়ানবাজারে অফিসে পৌঁছাতে অন্তত দেড় ঘণ্টা পথ পাড়ি দিতে হতো। তিনি বলেন, এটি তার জন্য একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা যে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে তিনি মাত্র ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে তার অফিসে পৌঁছাতে সক্ষম হন।
আরেক যাত্রী রাফিউজ্জামান রিয়ন বলেন, লোকাল বাসে অনেক বেশি স্টপেজ থাকে, অনেক বেশি সময় লাগে এবং তারা প্রায়ই বেশি ভাড়া আদায় করে।
তিনি বলেন, বিআরটিসি এক্সপ্রেসওয়ে রুটে ই-টিকিটিং ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়, তাই ফি ন্যায্য থাকে। বিআরটিসি বাসের সিটকে আরও আরামদায়ক করে তুলতে পারে। এছাড়াও, যদি এই রুটে আরও কয়েকটি স্টপ থাকে তবে এটি আরও বেশি সংখ্যক যাত্রীকে সহায়তা করবে।