পাঠ্যবইয়ে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের
দেশে উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার। যার ফলে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এমন অবস্থায় দেশের শিক্ষা কারিকুলামের পাঠ্যবইয়ে 'অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স' বিষয়ে পাঠ যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
সচেতনতা বাড়াতে পাঠ্যবইয়ে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের বিষয়টি অন্তর্ভুক্তি চায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ২৯ অক্টোবর রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে একটি গোলটেবিল বৈঠকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কাছে বিষয়টি তুলে ধরে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি বলেন, "অ্যান্টিবায়োটিক অপব্যবহার রোধে অনেক সংগঠন একসাথে কাজ করছি। এ বিষয়ে আমাদের একটি আইন হয়েছে। আইন ভঙ্গ করলে এখন শাস্তির বিধান আছে। আমরা চাই, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাঠ্যবইয়ে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হোক। এই বয়সে বিষয়টির ভয়াবহতা জানলে তারা স্বেচ্ছায় অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাওয়া থেকে বিরত হবে।"
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম জানান, তাদের নিকট ৪০টি ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রণালয়/ অধিদপ্তর/সংস্থার বিভিন্ন বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ রয়েছে। সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। তিনি ভবিষ্যতে নবম ও দশম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার আশাবাদ প্রকাশ করেন।
গোলটেবিল আলোচনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সাইদুর রহমান বলেন, "যে কোনো ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রেই আমাদের সচেতনতা দরকার। এখনই আমাদের সন্তানদের সচেতন করতে হবে। পাঠ্যবইয়ে জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে সুস্থ জাতি গঠনে আমরা এগিয়ে যাব।"
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক সায়েদুর রহমান। তিনি জানান, দেশে বেড়েছে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার। ২০২০ সালে প্রতি হাজার জনগোষ্ঠীতে এর ব্যবহার ছিল ২৫ ভাগ; ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ ভাগে।
এ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে পাঠ্যবইয়ে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তিনি। বলেন, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করলে সচেতনতামূলক বার্তা পাবে এক কোটি শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সকে মানবসভ্যতার জন্য ১০টি স্বাস্থ্য হুমকির মধ্যে অন্যতম একটি স্বাস্থ্য হুমকি হিসেবে ঘোষণা করেছে। বর্তমানে প্রতিবছর ১২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স এর কারণে মারা যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সালে মারা যাবে ১ কোটি মানুষ। অপ্রয়োজনে বা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ঔষধ বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক স্বেচ্ছায় সেবন, এন্টিবায়োটিকের ফুল কোর্স সম্পন্ন না করা, পশু ও মৎস খাদ্য (ফিডে) বা চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের প্রধানতম কারণ। আসন্ন এই মহামারীর হাত থেকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে সচেতন হতে হবে আমাদের এখন থেকেই।
বক্তারা বলেন, পাঠ্যপুস্তক প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত বিষয়াদি প্রতিটি মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটায়, জীবনযাত্রাকে পরিবর্তন করে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বিষয়টি শুধু মাত্র সচেতনতামূলক সভা করে রোধ করা সম্ভব নয়। এটা রোধে প্রয়োজন সচেতনতা, অভ্যাস ও দায়িত্বশীলতা।