নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩৭ প্রকল্প অনুমোদন একনেকে
সরকারের শেষ সময়ে এসে মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) ৫২,৬১২ কোটি টাকার ৩৭টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
যদিও সভায় অনুমোদনের জন্য মোট ৪৬টি প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়েছিল। সময় স্বল্পতার কারণে ৯টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়নি, যেগুলো পুনরায় একনেকে উপস্থাপন কর হবে বলে জানানো হয়েছে সভা পরবর্তী সংবাদ সস্মেলনে।
সাধারণত প্রতি একনেক সভায় ১০-১৫টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হলেও এবার নির্বাচন সামনে এক একনেকেই ৩৭ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর আগেও নির্বাচন সামনে তড়িঘড়ি করে অনেক প্রকল্প সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই ছাড়াই অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে প্রায় প্রতিটি একনেকে ৪০টির বেশি প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়। তবে একনেক সভায় সর্বোচ্চ ৩৮টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরে বাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, "নির্বাচন মুখী প্রকল্প নয়, বর্তমান সরকার উন্নয়নের জন্য প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। সরকার উন্নয়নে বিশ্বাস করে, এ কারণেই এত বেশি প্রকল্প অনুমোদন দিচ্ছে।"
পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, "প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গত ১৪-১৫ বছরে সরকার কোনো প্রকল্পই শুধু টিকমার্ক দিয়ে অনুমোদন করেনি। পুঙ্খানুপুঙ্খু পর্যালোচন করে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে দেশে এত উন্নয়ন হয়েছে।"
সচিব আরো বলেন, নির্বাচনের আগে আরও একনেক হবে। আগামী একনেকে যে প্রকল্প আসবে সেগুলোও সঠিকভাবে যাচাই করে অনুমোদন দেওয়া হবে।
অনুমোদনের জন্য যেসব প্রকল্প আসবে সেগুলো নির্বাচন কেন্দ্রীক নয়, উন্নয়ন কেন্দ্রীক হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, প্রায় দুই মাস পর একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ কারণে প্রকল্প জট তৈরি হয়েছে।
এ সময় পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে থাকা প্রকল্প এবং বৈদেশিক ঋণ নির্ভর প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
"নির্বাচনের কোনো বিষয় নয়, প্রকল্প দ্রুত শেষ করতে পারলে দ্রুত সুফল আসবে। এছাড়া বৈদেশিক ঋণের প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ হলে একদিকে প্রকল্পের সুফল পাওয়া যাবে, অন্যদিকে আমাদের হিসাবে কিছু বৈদেশিক মুদ্রাও আসবে," বলেন তিনি।
একনেক সভায় সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আবারও ডেডিকেটেড তহবিল গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, "বর্তমান সরকার অনেক সড়ক বানিয়েছে। রাস্তা পাকা করেছে। পানির দেশ হওয়ার কারণে সড়ক বেশিদিন টিকে না। আবার আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে গতি হচ্ছে, তাতে প্রতিনিয়ত সড়কে যান চলাচল বেড়েছে। যে হিসার করে আমরা রাস্তা নির্মাণ করেছি, তার চেয়ে বেশি যান চলাচল করছে। এতে সড়ক ভেঙ্গে যাচ্ছে। ফলে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে আমাদের হিমশিম খেতে হয়।"
"এ অবস্থায় বর্তমানে যেভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে, তার বাইরে গিয়ে জাতীয় মহাসড়ক থেকে টোল আদায় করে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি তহবিল গঠন করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এতে জোরালোভাবে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং সেতু বিভাগ কোনো কোনো সড়কে বা সেতু টোল আদায় করা সে বিষয়ে কাজ করছে," যোগ করেন তিনি।
মঙ্গলবার একনেক সভায় অনুমোদন পেয়েছে ৮,৫৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ে ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট। এই প্রকল্পে ৫,৭০৯ কোটি টাকা ঋণ দেবে জাপান সরকার।
কক্সবাজারের নির্মাণাধীন মাতারবাড়ি বন্দরের সঙ্গে টেকসই যোগাযোগ স্থাপনে এই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রকল্পের আওতায় পটিয়া, দোহাজারী, লোহাগড়া, চকরিয়ায় চার লেনের আউটার রোড নির্মাণ করা হবে। কেরানীহাটের নির্মাণ করা হবে ফ্লাইওভার।
গ্যাস মিটার স্থাপনে ৬,৪৩৭.৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্যাস মিটার স্থাপনের তিনটি প্রকল্পও একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প তিনটি হলো– পিজিসিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি এলাকায় স্মার্ট প্রিপেইড গ্যাস মিটার, এসসিএডিএ এবং জিআইএস স্থাপন; গ্যাস সেক্টর এফিসিয়েন্সি ইমপ্রুভমেন্ট অ্যান্ড কার্বন অ্যাবেটমেন্ট প্রজেক্ট এবং স্মার্ট মিটারিং এনার্জি এফিসিয়েন্সি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট।
দেশের সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ টিকা উৎপাদন এবং এসেনশিয়াল বায়োটেক অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার স্থাপনে ৩,৭৩৮ কোটি টাকার দুটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই দুই প্রকল্পে ৩,২৪১ কোটি টাকা ঋণ দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এই দুই প্রকল্পের মধ্যমে আমদানি রির্ভরতা কমবে এবং টিকার রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অনুমোদন পাওয়া অন্য উল্লেখ্য প্রকল্পগুলো হলো— আনোয়ারা উপজেলা সংযোগ সড়কসহ কর্ণফুলী টানেল সংযোগ সড়ককে ৪-লেনে উন্নীতকরণ, আমিন বাজার ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ, যমুনা নদীর টেকসই ব্যবস্থাপনা প্রকল্প-১ (নেভিগেশনাল চ্যানেল উন্নয়ন), মতলব উত্তর-গজারিয়া সড়কে মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ, বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অফসাইট পানি সরবরাহের সুবিধাদি স্থাপন।