জলাধার আইনের সাথে সঙ্গতি রেখে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে ঢাকা: নগর বিশেষজ্ঞরা
বৈশ্বিক ও জাতীয় সকল গাইডলাইন অনুযায়ী জলাধার আইনের সাথে সঙ্গতি রেখে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ঢাকা শহর ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।
তারা আরও বলেন, নগরায়নের ক্ষেত্রে ভৌগলিক অবস্থানকে বিবেচনা করা হচ্ছে না যার ফলে নগরগুলো বন্যা, ভূমিধস, ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের কবলে পড়ছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন শহর এ দুর্যোগের কবলে পড়েছে।
শনিবার বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবস-২০২৩ উপলক্ষ্যে আয়োজিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) আয়োজিত জাতীয় সেমিনার তারা এসব কথা বলেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে পরিকল্পনাবিদ মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, ১৯৬০ সালের পর থেকে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঊর্ধ্বমুখী এবং সাম্প্রতিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তা আরও বেশী ত্বরান্বিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় আমাদের সকল তথ্য উপাত্ত এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নগর ও অঞ্চল গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর এর যৌথ উদ্যোগে এবং জার্মান করপোরেশন ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশনের (জিআইজি) সহযোগিতায় প্রস্তুত হয় ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইনক্লুসিভ আরবান মাস্টার প্ল্যান। বৈশ্বিক ও জাতীয় সকল গাইডলাইন মেনে এবং জনসাধারণের অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করে এই মাস্টার প্ল্যানটি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, "এই মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ঢাকার ক্ষেত্রে আমরা জলাধার আইনের সঙ্গতি রেখে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছি। বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা ও জাতীয় নির্দেশিকার সমন্বয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে এর যথাযথ প্রয়োগের ক্ষেত্রে পরিকল্পিত নগর গঠনের বিকল্প নেই।।"
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, "আমাদের শহরে অনেক নাগরিক থাকলেও সুনাগরিকের বড়ই অভাব। সকলেই খাল, মাঠ দখল করে প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যা অজুহাত দেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কখনই খেলার মাঠ বা উন্মুক্ত স্থানে আবাসন করার অনুমতি দেন না।"
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, "ঢাকা শহরের খাল সমূহ পুনরুদ্ধারে দুই সিটি কর্পোরেশনের সকল প্রকল্পই ইতোমধ্যে একনেক এর সভায় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। এখন কারও তোয়াক্কা না করে নির্ভীকভাবে এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা গেলেই ঢাকার সকল খাল পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।"
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মোঃ আনিসুর রহমান মিঞা বলেন, "বিভিন্ন সময়ে ঢাকা শহরের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা করা হলেও সর্বশেষ বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (২০২২-২০৩৫) এ শহরের পরিকল্পনা করা হয়। নতুন কোনও পরিকল্পনা ড্যাপের বাহিরে গিয়ে করতে পারবে না। কনস্ট্রাকশন রেজিলিয়েন্স এর ব্যাপারে বহু বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও ইলেক্ট্রনিক পারমিটিং সিস্টেম প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং আজ (শনিবার) থেকে তা কার্যকর হচ্ছে। এখন থেকে এই সিস্টেমের মাধ্যমে ভবনের অকুপেন্সি সনদ প্রদানের ক্ষেত্রে রাজউক এর পাশাপাশি ভবন নির্মাণ সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদেরও সমান দায়বদ্ধতা নিতে হবে।"
সেমিনারে বিআইপি সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন বলেন, "বাংলাদেশে ১৯৫৯ সাল থেকে যত ধরনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে তা সঠিকভাবে হলেও তার প্রয়োগ সঠিকভাবে হচ্ছে না। সারা বাংলাদেশে ৮০ ভাগ নগরায়নের যে লক্ষ্য করা হয়েছে, সেজন্য সরকারের সকল প্রকল্পকে অবশ্যই পরিকল্পনার কাঠামোর আওতায় আনতে হবে, লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক থাকতে হবে, এবং এই সকল তথ্য আমরা সুগঠিতভাবে বাংলাদেশের জন্য একটি স্থানিক পরিকল্পনা কাঠামোর মাধ্যমে প্রস্তাব করেছি।"
তিনি বলেন, "হাতিরঝিল ভরাট করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করার বিরুদ্ধে অনেক চেষ্টা করা হলেও হাতিরঝিলের অবক্ষয় থামানো যাচ্ছে না। পরিকল্পনা একটি পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া। এজন্য আমাদের যথাসম্ভব তৎপরতার মাধ্যমে এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।"
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)-এর উদ্যোগে এবং ইউএন-হ্যাবিটেট ও নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম এর সহযোগিতায় সেমিনারের সঞ্চালনা করেন বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান।