তাজরীন ফ্যাশনস অগ্নিকাণ্ডের ১১ বছর: সাক্ষীদের হাজির করতে ব্যর্থ হওয়ায় পেছাচ্ছে শুনানি
রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের হাজির করতে ব্যর্থ হওয়ায় বার বার পেছাচ্ছে 'তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেড' অগ্নিকাণ্ডের মামলার শুনানি। অন্যদিকে এ কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ঘটনার মূল আসামি তাজরীনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন জামিনে জেল থেকে বেরিয়ে এসে রাজনীতি করছেন।
আদালত সূত্র জানা যায়, অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনার ১১ বছরে এসে চলতি বছর মাত্র চারটি শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। তবে এতেও সাক্ষীদের হাজির করতে ব্যর্থ হয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
আগামী বছরের মার্চ মাসের ২৫ তারিখ পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হওয়া বলে জানান আইনি সহায়তা দেওয়া সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সিফাত-ই-নূর খানম।
তিনি বলেন, "সব স্বাক্ষীকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে বার বার ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হওয়া ফৌজদারি মামলার শুনানি পিছিয়ে যাচ্ছে।"
তৈরি পোশাক শ্রমিক নেত্রী নাজমা আক্তার বলেন, "যে ঘটনা সারা পৃথিবী দেখেছে তার জন্য কেন স্বাক্ষী আনতে হবে! ১১১ জনের হত্যাকাণ্ড তো কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।"
দীর্ঘদিন বিলম্ব করার মধ্য দিয়ে মামলাটি থেকে নজর সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশনস গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১৭ জন পোশাককর্মী নিহত হন। আহত হয়েছিলেন ২ শতাধিক। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন মাত্র ১১ জন।
আলোচিত এ মামলাটি ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। সবশেষ গত ১ নভেম্বর মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। ওই দিনও সাক্ষী উপস্থিত না হওয়ায় আদালত পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী বছরের ২৫ মার্চ দিন ধার্য করেছেন।
এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক এ কে এম মহসিনুজ্জামান খান ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর আদালতে তাজরীন ফ্যাশনস-এর এমডি দেলোয়ারসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। প্রতিটি অনুসন্ধানেই মালিক-কর্তৃপক্ষের শ্রমিক নিরাপত্তা বিষয়ে সার্বিক অবহেলার চিত্র তুলে ধরা হয়।
এর মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, 'তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেডে সংঘটিত এই মর্মান্তিক মৃত্যুর বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। যা দেশে এবং বিদেশে ব্যাপকভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আগুন লাগার বিষয়টি নাশকতা হতে পারে, তবে এত বিপুল মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য মালিকের অমার্জনীয় অবহেলাই দায়ী। এটি সুস্পষ্টভাবে অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানোর অপরাধ। তাই তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেডের মালিককে দণ্ড-বিধির ৩০৪ (ক) ধারায় আইনের আওতায় এনে বিচারে সোপর্দ করার সুপারিশ করা হলো।'
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়। একটি মামলা দায়ের করেন একজন নিখোঁজ শ্রমিকের ভাই। আশুলিয়া থানার পুলিশ বাদী হয়ে অপর মামলাটি দায়ের করে।
তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছেন তোবা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন। তিনি এখন ক্ষমতাশীল দলের সহযোগী সংগঠন মৎস্যজীবী লীগের রাজনীতিতে জড়িত।