বারবার মনোনয়ন জমা দিলেও ভোটে লড়তে পারেন না জাহাঙ্গীর
চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ। অনেকটা বিমর্ষ চেহারা। পরনে আকাশি রঙের বোতামখোলা পুরোনো পাঞ্জাবি, কালো প্যান্ট, পায়ে স্যান্ডেল। দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি সংসদ সদস্য প্রার্থী। তাও আবার টানা পাঁচবারের মতো! যদিও কোনোবারই ভোটে লড়তে পারেননি। প্রতিবারই যাচাই-বাছাইয়ে মনোনয়নপত্র বাতিল হয় পঞ্চাশোর্ধ্ব মো. কাজী জাহাঙ্গীরের। তবে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের আশায় এবারও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহগীর আলমের কাছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। তবে এবারও মনোনয়নপত্র জমাদানের সময় জাহাঙ্গীরের সঙ্গে ছিলেন না কেউ। তার নেই কোনো দলীয় পরিচয়, নেই কর্মী-সমর্থকও।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের কাজীপাড়া এলাকার কাজী আব্দুল হান্নান ভূইয়া ও আমেনা বেগম দম্পতির নয় সন্তানের মধ্যে জাহাঙ্গীর সবার বড়। ধান কেনাবেচা আর গাভি পালন করেই জীবনের চাকা ঘোরে তার। ধান আর দুধ বিক্রি করে প্রতি মাসে হাজার বিশেক টাকার মতো আয় করেন তিনি।
জাহাঙ্গীর বলেন, 'আমার ওপর বাবা-মাসহ পাঁচ–ছয়জন নির্ভরশীল। আমার উপার্জনেই তাদের জীবন চলে। বাবা-মা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। আমাকেই বেশিরভাগ সময় রান্নাবান্না করতে হয়। আজকেও আমাকেই রান্না করতে হয়েছে। বাবা-মাকে খাইয়ে দিয়ে তারপর মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসেছি।'
টাকা-পয়সা খরচ করার সক্ষমতা নেই বলে একাই মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসেছেন তিনি। জানান, যদি এবার মনোনয়নপত্র বৈধ হয়, তাহলে 'মানুষজন আর্থিক সহযোগিতা করবে নির্বাচনের জন্য'।
নির্বাচনের 'নেশা'য় বিক্রি করেছেন জায়গা-জমি
জাহাঙ্গীর অকপটে বললেন, নির্বাচন তার কাছে একটি নেশা। পরিবারের সদস্যরা তার ওপর নির্ভরশীল বলে তারাও এ ব্যাপারে তাকে বাধা দিতে পারেন না। তিনি শুধু সংসদ নির্বাচনেই অংশ নেন। প্রতিবারই তার কাগজপত্রে ত্রুটির কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। 'আমার তো অনেক টাকা ফি দিয়ে মনোনয়নপত্র পূরণ করানোর সামর্থ্য নেই। তাই নিজেই নিজের মনোনয়ন ফরম পূরণ করি। এজন্য ত্রুটি থেকে যায়,' বলেন জাহাঙ্গীর।
নির্বাচন করতে গিয়ে ইতোমধ্যে অনেক টাকা-পয়সা ব্যয় করেছেন তিনি। তার ভাষায়, 'নষ্ট করেছেন'। 'জায়গা-জমি সবই বিক্রি করেছি। এখন শুধু বাড়িটুকু আছে।' নির্বাচনের দৌড়ে বেশিদূর পৌঁছাতে না পারলেও তিনি জানান, "মানুষজন আমাকে ভালোবেসে 'এমপি সাহেব' বলে ডাকে।"
কাজ করতে চান তরুণ ও কৃষকদের জন্য
কাজী জাহাঙ্গীর প্রতিহিংসার রাজনীতি পছন্দ করেন না। তিনি বলেন, 'এখন প্রতিহিংসার রাজনীতি চলে। এগুলো আমি পছন্দ করিনা। সেজন্য আমি কোনো দলে যোগ দিইনা। আমি অনেক কিছুই পরিবর্তন করতে চাই।'
অন্তত একবার এমপি পদে বিজয়ী হয়ে কৃষিতে পরিবর্তন আনতে চান তিনি। 'কারণ কৃষকেরাই আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন। এছাড়া তরুণ সমাজের অধিকাংশই নেশায় আসক্ত। কারণ তাদের কোনো কর্মসংস্থান নেই। আমি তাদের জন্য কর্মসংস্থান করে নেশামুক্ত সমাজ গঠন করতে চাই।'
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছয়টি সংসদীয় আসনে মোট ৫৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন ১৩ জন।