বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়ে বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার পর এর নাম দেওয়া হয়েছে 'মিগজাউম'।
দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর এই নিম্নচাপটি আরও উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় (১১.৫° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮২.৫° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। আজ রোববার (৩ ডিসেম্বর) সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে এ তথ্য।
তবে এর আগে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এই ঘূর্ণিঝড়ের বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা নেই।
ঘূর্ণিঝড়টি আগামী মঙ্গলবার থেকে বুধবারের মধ্যে উপকূলের কাছাকাছি চলে আসতে পারে। তবে এর গতিপ্রকৃতি বলছে, এটি ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্যের ভিশাখাপত্তম সমুদ্র বন্দরের ওপর দিয়ে স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে।
গতকাল আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক টিবিএসকে বলেন, "রোববার নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে, কিন্তু এটি বাংলাদেশের দিকে আসার আশঙ্কা কম। তবে এর প্রভাবে আগামী মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। সাথে দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে।"
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় 'মিগজাউম' আজ সকাল ৬ টায় (০৩ ডিসেম্বর, ২০২৩) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৫৭৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৫২৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৪৫০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪৫০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কি.মি. এরমধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি.– যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুদ্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ১ (এক) নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ২ (দুই) নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারী সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদরা বলছেন, নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর ও তীরবর্তী দেশগুলোতে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। আগামী দুই থেকে চার দিন এ ধরনের আবহাওয়া থাকতে পারে। এর প্রভাবে ২/১ দিনের মধ্যে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হতে পারে।
এর আগে, কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর পিএইচডি গবেষক আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ টিবিএসকে বলেন, আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো নির্দেশ করছে রোববার থেকে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের উপকূল ঘেঁষে উত্তর দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, "তবে ঘূর্ণিঝড়টির বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা কেটে গেছে। মঙ্গলবার ওড়িশা রাজ্যের উপকূলে পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড় হিসাবে এটি ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার বেগে আঘাত করতে পারে।"