বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতির সর্বশেষ অগ্রগতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে শিগগিরই জানানো হবে: বাণিজ্য সচিব
বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতির সর্বশেষ অগ্রগতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে শিগগিরই জানানো হবে বলে আজ (৪ ডিসেম্বর) জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
সোমবার সকালে দেশের শ্রম পরিস্থিতির অগ্রগতি এবং সম্প্রতি সারা বিশ্বের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশিত শ্রম অধিকার বিষয়ক মেমোরেন্ডাম নিয়ে পর্যালোচনা সভা শেষে সচিব তপন কান্তি ঘোষ সাংবাদিকদের জানান, "শিগগিরই 'থ্রি প্লাস ফাইভ' মিটিং হবে। সেখানে বাংলাদেশের শ্রম বিষয়ক ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যানের বাস্তবায়ন এবং সর্বশেষ অগ্রগতিও তুলে ধরা হবে।"
শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি স্মারক অনুমোদন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্র শ্রম অধিকার ক্ষুণ্ণ করেছে মনে করলে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞাসহ অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে।
বাংলাদেশ এ ধরনের নিষেধাজ্ঞায় পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। আর যদি তা ঘটে তাহলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য নিশ্চিতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেননা বাংলাদেশ থেকে একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে।
অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নও শ্রম অধিকার ও মানবাধিকার ইস্যুতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে, যা তারা আমদানির উৎস দেশগুলোতে বাস্তবায়ন করতে চায়।
ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মূল বাজার। ফলে রপ্তানিকারকদের মধ্যে এসব বিষয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতির অন্যতম টার্গেট হতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক কারণে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে।
এ বিষয়ে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, "বাংলাদেশের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে পরিস্থিতি আরো উন্নত হোক। এটা আমরাও চাই।"
বাণিজ্য সচিব বলেন, বাংলাদেশের শ্রম ও পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। বেজা আইন করা হয়েছে। শ্রম আইনের সংশোধন করা হয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ বাড়ানো হয়েছে।
"বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপী ইউনিয়ন এর সঙ্গে গত মাসে সভা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে টিকফার সভায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও আলোচনা হয়েছে। ওইসব সভায় তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে," বলেন তিনি।
তপন কান্তি ঘোষ বলেন, "যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন চায় আরো উন্নতি হোক। আমরাও মনে করি আমাদের আরো অগ্রগতি করতে হবে। যে কারণে সবসময় সংস্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হয়েছে। সরকার সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করেছে, সেখানে শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নানা ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।"
"এরপরও আরো উন্নয়ন আমরা করবো। কারণ বাংলাদেশের রপ্তানির ৬০% হয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রে। প্রধান এই বাজারে প্রতিযোগিতামূলকভাবে ব্যবসা করছে বাংলাদেশ। এরপরও আরো কমপ্লায়েন্স অর্জন করতে হবে," বলেন তিনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম, শ্রম সচিব এহছানে এলাহী, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমই এর নির্বাহী সভাপতি মো. হাতেম উপস্থিত ছিলেন।
শ্রম সচিব মো. এহছানে এলাহী বলেন, "ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান এর কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে, কিছু হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৭-৮টি পয়েন্ট বলেছে, যেগুলো করতে হবে। শিগগিরই মালিকপক্ষকে নিয়ে সেইসব সংশোধনী করা হবে এবং আগামী সংসদে উপস্থাপন করা হবে।"